আমসত্ত্বর বাজার ধরতে সরকারি সাহায্য দাবি
'মালদায় এসেছি, তাও আবার আমের সময়ে। আমসত্ত্ব তো নিয়ে যেতেই হয়' - বিমলবাবুকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাল। ব্যারাকপুর থেকে বিশেষ কাজে মালদায় আসা। দিন তিনেকের কাজ। তারপর আবার ঘরে ফিরবেন। তার ফাঁকেই মালদার আমের সঙ্গে আমসত্ত্বের স্বাদটাও মেয়ে-বউকে দিতে চান। তাই দেরি না করে আমসত্ত্বের খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন।
'ও দাদা, বলি ভালো আমসত্ত্ব হবে? বাইরে নিয়ে যাব কিন্তু। ভালো না হলে ইজ্জত থাকবে না।' নিশ্চয় হবে। মালদার খাঁটি আমসত্ত্বই দেব। এই দেখুন। বিমলবাবুর দিকে আমসত্ত্বের একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলেন বিক্রেতা। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গেলেন বিমলবাবু। ‘ওমা, এ যে কালো ইট। আমসত্ত্ব হবে কেন গো?’ আরে দাদা, এটাই খাঁটি। “না না, এটা চাইছি না। ওই যে সন্দেশের মধ্যে থাকে। কমলা কমলা রঙের। নরম নরম। মুখে মিলিয়ে যায় একেবারে। ওইগুলো দিন।” দূর মশাই। ওটা আমসত্ত্ব হবে কেন! ওগুলো কুমড়োসত্ত্ব। বিক্রেতার কথায় হতবাক বিমলবাবু। তাহলে কি এতদিন আম ভেবে কুমড়ো খেতাম? নিজেকেই যেন প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন।
[ আরও খবরঃ ব্ল্যাকমেলকে হাতিয়ার করে আসিফ ]
কলকাতায় মালদার আমসত্ত্ব বলতে অনেকেই এই কুমড়োসত্ত্বকেই চেনেন। এই জায়গাতেই মালদার আমসত্ত্বের কারিগরদের আফসোস। তাঁদের বক্তব্য, জেলায় বহু পরিবার আমসত্ত্ব তৈরির ওপর নির্ভরশীল। অনেকেরই সংসার চলে আম আর আমসত্ত্বের জন্য। কিন্তু এখানকার তৈরি আমসত্ত্ব যদি বাইরের লোক নাই চেনেন, তবে ব্যবসা বাড়বে কীভাবে?
মালদার আমের জগৎজোড়া খ্যাতি। স্বাভাবিকভাবেই তা থেকে তৈরি আমসত্ত্বের কদরও ভালোই। কিন্তু এই আমসত্ত্ব তৈরির সেভাবে কোনও সরকারি সহায়তা মেলেনা। মালদা জেলায় তিরিশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম চাষ হয়। এবার জেলায় কম করেও তিন লাখ মেট্রিক টন আম হওয়ার কথা। সেদিকটা মাথায় রেখে আমসত্ত্ব তৈরিতে নেমে পড়েছিলেন কোতোয়ালি, ধানতলার মহিলারা। ইংরেজবাজারের এই এলাকায় তৈরি আমসত্ত্বই রং ও স্বাদে সব থেকে উৎকৃষ্ট। অবশ্য কালিয়াচক হোক বা হরিশ্চন্দ্রপুর, জেলার সব এলাকাতেই অল্পবিস্তর আমসত্ত্ব তৈরি হয়।
গোপালভোগ আম থেকে ভালো মানের আমসত্ত্ব তৈরি হয়। এক কিলো আমসত্ত্ব তৈরিতে প্রায় ২০ কিলো ভালো মানের আম লাগে। আমের রস দিয়ে আমসত্ত্ব বানাতে সময় তো লাগেই, পরিশ্রমের ঘামও ঝরে অনেক। তবে সবকিছুর পর সুস্বাদু আমসত্ত্ব তৈরি হয়ে গেলেই ব্যস, তাকে বাজারজাত করার পালা।
এখানেই সমস্যা। আমসত্ত্বের কারিগররা বলছেন, কম করে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কিলো দরে বেচতে না পারলে লোকসান হবেই। কিন্তু এই দামে আমসত্ত্ব বেচার জন্য সর্বভারতীয় বাজার চাই। আর সেজন্য চাই সরকারি সাহায্য। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ঠিকমতো প্রক্রিয়াকরণ হলে ও সরকারি সাহায্য পেলে আমসত্ত্ব প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেবে।
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন,
প্রধানত গ্রামের মেয়েরাই আমসত্ত্ব তৈরি করেন। কিন্তু তাঁরা কোনও সরকারি সাহায্য পান না। আমসত্ত্ব তৈরির পর তা ভিনরাজ্যে ও বিদেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত যদি সরকার করতে পারে, তাহলে জেলার আর্থসামাজিক উন্নতি হবে।
কালিয়াচকের আমসত্ত্বের কারিগর সিতারা বিবির গলাতেও আক্ষেপের সুর শোনা গেল। তিনি বলেন, আমসত্ত্ব তৈরি করতে প্রচণ্ড খাটুনি। কিন্তু সেভাবে দাম পাই না। সরকার যদি একটু এদিকে দেখত, তাহলে ব্যবসা বাড়ত।
মালদা জেলা উদ্যানপালন দফতরের কর্তা কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, পুরোনো রীতিতে যেভাবে আমসত্ত্ব তৈরি হয়, তা বিদেশে পাঠানোর উপযোগী নয়। তবে মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত আমসত্ত্ব তৈরি করতে পারলে একটা সম্ভাবনা থাকবে।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments