১৭ বছর পর ফের আগ্রাসী গঙ্গা, নদী ঢুকে যাচ্ছে গ্রামের ভিতরে
২০০৩ সালের পর ফের আগ্রাসী গঙ্গানদী। এবার গঙ্গা পাড় ভাঙছে কালিয়াচক ২ ব্লকের বাঙ্গিটোলা ও বৈষ্ণবনগর এলাকায়। প্রায় ১৮ বিঘা জমি গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়েছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের চকবাহাদুরপুর, সূর্যপাড়া, সরকারপাড়া এলাকায়। নদীর উপরে সেচ দফতরের সতর্ক দৃষ্টি থাকলেও ভাঙনের ভয়ে রাতের ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের। রিংবার থেকে এখন নদীর দূরত্ব মাত্র ৩০ মিটার।
গত দুই-তিনদিন ধরে বাঙ্গিটোলা ও বৈষ্ণবনগর অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছে গঙ্গা। নদীর উপরে সেচ দফতরের সতর্ক দৃষ্টি থাকলেও এলাকায় তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গত সাতদিন ধরে ধীরে গতির ভাঙন হলেও রবি ও সোমবার নদী ব্যাপক আকার ধারণ করেছে কালিয়াচক ২ ব্লকের বাঙ্গিটোলা অঞ্চলের জোতকস্তুরি গ্রামে। ইতিমধ্যেই গঙ্গা এখানে ‘ইউ’ আকার ধারণ করে প্রায় ৪০-৫০ ফিট গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। নদীর পাড় বরাবর ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি গ্রাস করে ফেলেছে গঙ্গা। বাঙ্গিটোলা থেকে পঞ্চানন্দপুর পর্যন্ত একটি রিংবাধ থাকলেও এই এলাকায় বাঁধের দূরত্ব সবচেয়ে কম। এই পরিস্থিতিতে নদী থেকে বাঁধের দূরত্ব এখন ৩০ ফিটের থেকেও কম। ফলে ভাঙ্গনের পাশাপাশি গোটা কালিয়াচক ২ ব্লকে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এইসময় গঙ্গার তীরবর্তী কেবি ঝাউবোনা গ্রামপঞ্চায়েতের ১০-১২টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ২০০৩ সালের ভয়ংকর ভাঙনের পর বেশ কয়েক বছর এই অঞ্চলে আর বড়োসড়ো ভাঙন দেখা যায় নি। খানিকটা নিশ্চিন্তেই দিন কাটাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ এক সপ্তাহ ধরে এখানে সেচ দফতরের আধিকারিক বা রাজনৈতিক নেতারা ভাঙন পর্যবেক্ষণে আসেন নি। সেচ দফতর ভাঙন রোধের জন্য কোনও কাজ করছে না। স্থানীয় বাঙ্গিটোলা অঞ্চলের প্রধান গোটা বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছেন। এদিকে সেচ দফতর জানিয়েছে "ওই এলাকার পরিস্থিতির উপরে আমাদের পূর্ণাঙ্গ নজর আছে। প্রয়োজন হলে আমরা সেখানে বিশেষভাবে ভাঙনরোধের কাজ করব।"
অন্যদিকে গত সপ্তাহ থেকে অকাল ভাঙন শুরু হয়েছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের চকবাহাদুরপুর, সূর্যপাড়া, সরকারপাড়া এলাকায়। সেখানে প্রায় ১৮ বিঘা জমি গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা ভাঙনের কবলে। নতুন করে গঙ্গা এখানেও শুরু করেছে ধ্বংসলীলা, এরফলে ত্রস্ত পারচকবাহাদুরপুরের বাসিন্দারা। তিন সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফায় কৃষ্ণপুর গ্রামপঞ্চায়েতের চকবাহাদুরপুরে ভাঙন শুরু হয়। কিছুটা ভাঙনের পর গঙ্গা থেমে যায়। শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হয়েছে আবার ভাঙন। জানা গেছে, পারচকবাহাদুরপুর থেকে হোসেনপুর যাওয়ার রাস্তাটি ভাঙনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কৃষ্ণপুর গ্রামপঞ্চায়েতের পাশেই মুর্শিদাবাদের কুলিদিয়ারা। কুলিদিয়ারা-সহ মালদার কালিয়াচক-৩ ব্লকের চকবাহাদুরপুর, সূর্যপাড়া, সরকারপাড়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। প্রায় ১৮ বিঘা পটল, ভুট্টা, পাটের জমি চলে গেছে গঙ্গায়।
পাঁচকড়িটোলার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল জানান, ২০০৩ সালের বন্যার পর এখন বেশিরভাগ মানুষ বাঙ্গিটোলায় পেছনদিকে বসবাস করে। গত কয়েকবছর গঙ্গার ভাঙন থেমে যাওয়ায় আমরা নিশ্চিন্ত ছিলাম। এবার হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ ভাঙন আটকাতে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করুন। নইলে আর থামানো যাবে না। নদী বাঁধ অবধি চলে এলে মোটা মালদা জেলা ভেসে যাবে।
পূর্ব গোলকটোলা গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল বললেন, গত ৫ তারিখ থেকে গঙ্গানদী প্রায় ২৫-৩০ ফিট গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। আমরা পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সেচ দফতর, সকলকে জানিয়েছি। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেউ আসেন নি। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সুধীর মণ্ডল ও জয়দেব মণ্ডল জানালেন, আমাদের গ্রামের বহু লোকের জমি চলে গেছে গঙ্গায়। আমাদের দুই বিঘা জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই জমিই ছিল আমাদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল। এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এবার কী করে সংসার চালাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।
বাঙ্গিটোলা অঞ্চলের প্রধান সানতারা খাতুন জানিয়েছেন, ভাঙনের কথা জানতে পেরেই আমি বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছি। এখনই ভাঙন থামানো না হলে বড়ো ধরণের বন্যার আশঙ্কা থেকে যাবে গোটা ব্লকে।
জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গেছে, এখন গঙ্গা, ফুলহার নদীর জল বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দার জল কমছে। রবিবারের হিসেব অনুযায়ী গঙ্গা এখন বিপদসীমার কাছ দিয়ে বইছে। গঙ্গার জলস্তর ২৪.৪৫ মিটার আর বিপদসীমা ২৪.৬৯ মিটার। ফুলহারও বিপদসীমার কাছাকাছি, জলস্তর ২৭.২৭ মিটার এবং মহানন্দার জলস্তর ২০.৫৫ মিটার। সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রভাত সামন্ত জানিয়েছেন, মানিকচক থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে অল্পস্বল্প ভাঙনের সম্ভাবনা আছে। আমাদের প্রতিটি পয়েন্টের উপর নজর আছে। জোতকস্তুরি গ্রামের ভাঙনের খবর পেয়েছি। আমাদের নজর রেখেছি, প্রয়োজনমতো আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নেব। সেচ দফতরের জেলা নির্বাহী বাস্তুকার প্রণব সামন্ত বলেন, চকবাহাদুরপুর এলাকায় যেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে, তার কিছুটা অংশ ফরাক্কা ব্যারেজ দেখভাল করে আর কিছুটা জেলা সেচ দফতরের অধীনে। শনিবার ভোররাত থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। সকুল্লাপুরেও আমাদের নজর আছে।
মালদা জেলার টাটকা নিউজ এখন আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে। বিনামূল্যে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
টপিকঃ #Erosion
댓글