ভোটং দেহি, মায়ের কাছে আর্তি মধ্যবিত্তের
ঢাকের বাদ্যি বেজেই গেল৷ চলে এল আরও একটি দুর্গাপুজো৷ আমবাঙালির ‘দুর্গতিনাশিনী’৷ তা দুর্গতিটা মানুষের এবার যেন একটু বেশিই৷ পুজো মানে উৎসব৷ বাড়ির কচিকাঁচা, এমনকি বড়োরাও তাকিয়ে থাকে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর মুখের দিকে৷ ঘর থেকে বেরোনোর সময় একবার লোভাতুর চোখে সেই মানুষটার দিকে তাকানো৷ ঘরে ফেরার সময় সবার কৌতূহলী মুখ৷ হাত ফাঁকা দেখে সবার বিরস বদন৷ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে বছরের এই সময়টার ছবি যেন প্রতি বছরই এক৷ তবে এবার ছবিটা চোখে পড়ছে বড্ড বেশি৷
মহিষাসুরমর্দিনী। আমাদের মালদা ডিজিট্যালের নিবেদন। নির্দেশনাঃ সঙ্গীতা চৌধুরি, ছবিঃ রয় রয়
অঙ্কুশ চক্রবর্তী৷ মালদা শহরেই বাড়ি৷ একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী৷ মাতৃপক্ষ শুরু হয়ে গেলেও পকেটে বোনাস ঢোকেনি৷ মাইনে যা জোটে, তাতে পেটই ঠিকমতো ভরে না৷ প্রতিদিনই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে৷ দোকানিকে প্রশ্ন করলেই উত্তর আসছে, ‘পেট্রোল-ডিজেলের দামটা একবার দেখেছেন? সরকারকে বলুন সেটার দাম কমাতে৷ তাহলেই জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে৷’ দোকানির কথা ফেলে দেওয়ার উপায় নেই৷ কিন্তু পুজোয় বাড়ির সবার মুখে হাসি ফোটানোটাও তো অঙ্কুশবাবুর কাছে জরুরি! কী করবেন, পুজো শুরুর সাতদিন আগেও ভাবতে পারছেন না তিনি৷
বাস্তবিকই অগ্নিমূল্যের বাজারে বাঙালির উৎসব পালন যেন একটা বিলাসিতা৷ একটা সময় ছিল, যখন পুজোর অন্তত এক মাস আগে মধ্যবিত্ত বাঙালির বাড়িতে উৎসবের ধুম পড়ে যেত৷ একান্নবর্তী পরিবারে সেই দৃশ্য বড়োই সুখের৷ কিন্তু পরিস্থিতি পালটেছে৷ এখন বেশিরভাগ বাঙালিই নিউক্লিয়ার পরিবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ স্ত্রী আর দু’একটা ছেলেমেয়ে নিয়ে ফ্ল্যাট কালচারে তাঁদের জীবনযাপন৷ তাই এখন আর বাড়ির সব পুরুষদের উপার্জন একত্রিত করে পুজোর আনন্দ পালনের প্রশ্ন ওঠে না৷ কিন্তু বিপদ বাড়াচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সূত্র এবং রাজনীতির কারবারিদের ভোট নকশা৷
পুজো শেষ হতে না হতেই চলে আসছে আরেকটা ভোট৷ লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ৷ তাই এখন থেকেই গা ঝাড়া দিতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ ভোট করতে প্রচুর খরচ৷ সেটা আসবে কোথায় থেকে? সাধারণ মানুষের একাংশের ধারণা, তাঁদের পকেট কেটেই সেই খরচ তুলবে রাজনৈতিক দলগুলি৷ তাঁরা নাকি এদেশের ভোট ইতিহাস ঘেঁটে সেই তথ্যই পাচ্ছেন৷ ওদিকে, ভোটের মুখে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক দলকেই সাধারণ মানুষের ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে হবে৷ ইতিমধ্যে তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে৷ পেট্রোল-ডিজেলের দাম কিছুটা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তার আগেই অবশ্য এরাজ্যের সরকার প্রতি লিটার তেলে ১ টাকা সেস কমিয়েছে৷ সবার অনুমান, ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই দুই সরকার জনমোহিনী হয়ে উঠবে৷ কিন্তু সেই স্বস্তি কতদিনের জন্য? প্রশ্ন সেটাই৷
অঙ্কুশবাবুর মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য কিংবা মালদা শহরের রাস্তায় টোটো চালিয়ে উপার্জন করা নিখিল দাসরা এখন চাইছেন, আর ৫ বছর পর পর নয়৷ প্রতি বছর ভোট আসুক৷ তাহলেই তাঁরা স্বস্তিতে বেঁচে থাকার একটা রাস্তা পাবেন৷ নইলে আগুন বাজারে প্রতিনিয়ত তাঁদের নিধন হতে হবে৷ যেমন মা দুর্গার হাতে হাল হয়েছিল মহিষাসুরের৷ তাই দুর্গতিনাশিনীর কাছে তাঁদের প্রার্থনা, ‘হয় প্রতি বছর ভোট দাও, নাহয় আমাদের সবাইকে মালিয়া-চোকসি করে দাও৷ সন্তানদের তো দুধে-ভাতে রাখতে হবে!’
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments