top of page

নিখোঁজ কলেজ ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ

বাড়ি থেকে ট্রেনে চেপে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দীপ্তি ভগত৷ ঝাড়খণ্ডের দুমকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তেন তিনি৷ কথা ছিল, রামপুরহাট স্টেশনে নেমে দুমকাগামী ট্রেন ধরবেন৷ কিন্তু ফরাক্কা স্টেশনে হঠাৎ ডাউন কুলিক এক্সপ্রেস থেকে নেমে পড়েন তিনি৷ সেদিনই ফরাক্কার নেতাজি সেতু থেকে তাঁর ব্যাগ, ফাইল, মোবাইল ফোন, এমনকি ১৩০০ টাকাও উদ্ধার হয়৷ কিন্তু কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বছর কুড়ির ওই তরুণীর৷ অবশেষে আটদিনের মাথায় ফিডার ক্যানাল থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ৷ এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে এক তরুণের নাম৷ তবে কি সম্পর্কের টানাপোড়েনের শিকার দীপ্তি? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? উঠছে প্রশ্ন৷


দীপ্তির বাড়ি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বারদুয়ারি গ্রামে৷ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর ব্যবসায়ী বাবা দেবচরণ ভগত তাঁকে দুমকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করে দেন৷ দিন পনেরো আগে ক’দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি৷ গত রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশন থেকে ডাউন কুলিক এক্সপ্রেসে চেপে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি৷ ট্রেন মালদা টাউন স্টেশন ঢোকার মুখে ফোন করে বাবাকে জানিয়েছিলেন, মালদায় ট্রেন ঢুকলে তিনি প্রাতরাশ সারবেন৷ রামপুরহাটে দুপুরের খাবার খেয়ে দুমকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন৷


দেবচরণবাবুর বক্তব্য, ‘সেদিনই বিকেল নাগাদ ফরাক্কার এনটিপিসি ফাঁড়ির পুলিশ ফোন করে আমাদের জানায়, নেতাজি সেতুর উপর মেয়ের ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে ওর ফাইল, মোবাইল ফোন, এমনকি কলেজ ফিরে যাওয়ার সময় আমি যে ১৩০০ টাকা দিয়েছিলাম, সেটাও রয়েছে৷ নেতাজি সেতুর উপর ব্যাগটি পড়ে থাকতে দেখে এক ব্যক্তি সেটি ফাঁড়িতে জমা দিয়েছেন৷ এই খবর পেয়ে আমরা সেদিনই এনটিপিসি ফাঁড়ি থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করে আনি৷ রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় মেয়ের নামে মিসিং ডায়ারি করি৷ পুলিশের তরফে ফিডার ক্যানালে জাল ফেলে, ডুবুরি নামিয়ে মেয়ের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়৷ কিন্তু ওর সন্ধান মেলেনি৷ মেয়ের জন্য আমাদের রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল৷ এরই মধ্যে শনিবার কেউ আমার এক আত্মীয়ের মোবাইলে ফোন করে জানায়, দীপ্তি তাদের হাতে রয়েছে৷ ওরা মেয়ের মুক্তিপণ বাবদ দু’লাখ টাকা দাবি করে৷ আমরা বিষয়টি রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশকে জানাই৷ কিন্তু রবিবারই এনটিপিসি ফাঁড়ির পুলিশ ফোন করে জানায়, মেয়ের দেহ ফিডার ক্যানালের শংকরপুর ঘাট থেকে উদ্ধার হয়েছে৷ আমরা সেখানে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করি৷’


দীপ্তির জ্যেঠু গুরুচরণ ভগতের দাবি, ‘আমাদের অনুমান, দীপ্তিকে কেউ বা কারা ফরাক্কায় ট্রেন থেকে নামতে বাধ্য করেছিল৷ ওরাই তাকে খুন করেছে৷ তবে খুনের আগে ওর উপর কোনও অত্যাচার হয়েছে কিনা সেটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বুঝতে পারব৷ পুলিশের কাছে আমাদের দাবি, যথাযথ তদন্ত করে আসল ঘটনা সামনে আনা হোক৷ যে বা যারা এই কাজ করেছে, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক৷’



এনটিপিসি ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ফাঁড়িতে এসে গোটা ঘটনা জানানোর পর হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের আবেদনে ফিডার ক্যানালে জাল ফেলে ও ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল৷ কিন্তু তরুণীর খোঁজ মেলেনি৷ রবিবার শংকরপুর ঘাটের কাছে ক্যানালে একটি দেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা৷ দেহটি উদ্ধার করার পর দেখা যায়, সেটি মালদার নিখোঁজ তরুণীর৷ তাঁর পরিবারের লোকজন দেহ শনাক্ত করেছেন৷ পুলিশের তরফে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে৷ তবে এখনও তার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি৷ গোটা ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷


হরিশ্চন্দ্রপুর থানার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ফরাক্কা স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে, ঘটনার দিন দীপ্তি ট্রেন থেকে নেমে একাই প্ল্যাটফর্ম দিয়ে হেঁটে স্টেশন থেকে বেরিয়ে যান৷ তবে বাইরে তাঁর জন্য কেউ অপেক্ষা করছিল কিনা সেটা আর ফুটেজে ধরা পড়েনি৷ তদন্তে এক তরুণ মধুসূদন মাহাতোর নাম উঠে আসছে৷ দীপ্তির মোবাইল ফোনের তথ্য বলছে, এই তরুণের সঙ্গে নিয়মিত কথা হত তাঁর৷ কোনও কোনওদিন একাধিকবার এবং দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়েছে৷ এব্যাপারে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে তদন্তে আরও গতি আসবে৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page