পুলিশি নজরদারিতে জুয়ার আসরে আট থেকে আশি
জুয়ার মেলা। বছরের অন্যান্য দিন জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও আজকের দিনে তা উন্মুক্ত৷ অন্তত পুরাতন মালদায়৷ গোটা মেলা চত্বর জুড়ে জুয়ার বোর্ড। শুধু পুরুষরা নয়, এই মেলায় অংশ নেন বাড়ির মেয়ে-বউরাও৷ পুলিশি নিষেধাজ্ঞার বদলে মোতায়েন থাকে সাদা পোশাকের পুলিশ।
প্রাচীনকাল থেকে পুরাতন মালদা পুরসভার মোকাতিপুরে মুলাষষ্ঠী তিথিতে জুয়ার মেলা চলে আসছে৷ প্রতি বছর সকাল থেকে জুয়ার মেলায় হাজির হয় সাত থেকে সত্তর। ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। তবে আগের মতো এখন বিকেল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত জুয়া খেলা হয় না৷ সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলা গুটিয়ে নেওয়া হয় অন্ধকার নামার আগেই। সকালে মুলাষষ্ঠীর পুজো শুরু হয়। পুজো শেষ হতেই বসে জুয়ার আসর। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এই দিনে নিজের ভাগ্যকে যাচাই করে দেখেন। শুধুমাত্র মালদা জেলা থেকে নয়, মেলায় ভিন জেলা, এমনকি ভিনরাজ্য থেকেও অনেকে আসেন৷
কথিত আছে, তুর্কি শাসনকালে পুরাতন মালদার মোকাতিপুর এলাকা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল৷ রাতে তো দূরের কথা, দিনের আলোতেও হিংস্র জন্তু জানোয়ারের ভয়ে সেখানে যাওয়ার সাহস পেতেন না কেউ। এই জঙ্গলেই রয়েছে ষষ্ঠীদেবীর বেদি। বাড়ির মহিলারা যখন বেদিতে পুজো দিতে আসতেন, তখন সঙ্গে আসতেন বাড়ির পুরুষরা। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত চলত পুজো৷ সমস্ত সময়টা পাহারায় থাকতেন বাড়ির পুরুষরা। সময় কাটাতে তাঁরাই সেখানে জুয়া খেলা শুরু করেন। তখন থেকেই মেলায় এই জুয়ার রীতি। বছরের অন্যান্য দিন জুয়া নিষিদ্ধ হলেও এদিন জুয়ার বোর্ডে পুলিশের হানা পড়ে না। বরং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবারও মোতায়েন রয়েছেন ১৫-২০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার৷ তবে এখনও পর্যন্ত এই মেলায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আজ পরিবারের সঙ্গে পুজো দিয়ে মেলায় জুয়া খেলছিলেন এক যুবতি মৌমিতা সরকার। তিনি বলেন, “এটা পুরাতন মালদার ঐতিহ্য। প্রতি বছর এই মেলা বসে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এই মেলাতে আসি। পরিবারের সঙ্গে এসে প্রথমে পুজো দিই। পরে কিছু কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া সেরে জুয়া খেলে বাড়ি ফিরে যাই। এবছরও তাই করেছি। কিন্তু এবার জুয়া খেলায় হেরে গিয়েছি।” একই বক্তব্য ডলি প্রামাণিকের। তিনি বলেন, “এই মেলা জুয়ার মেলা নামে পরিচিত। মুলাষষ্ঠীর দিন এখানে সবাই পুজো দিতে আসে। পরে সবাই জুয়া খেলে বাড়ি ফিরে যায়। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও জুয়া খেলেন। আজকের দিনে জুয়া খেলায় সবার ছাড় রয়েছে। তবে পুলিশ সন্ধের সময় মেলা তুলে দেয়।”
[ আরও খবরঃ জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে মালদা ভবনের ]
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Commentaires