কালিয়াচকে তৃণমূলিদের ঝামেলা, গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের৷ মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের শিকার৷ এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত দু’জনকে আটক করেছে৷ যদিও এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি৷ গতকাল রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক ১ ব্লকের বামনগ্রাম মোসিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জলাকান্দি গ্রামের মাদ্রাসা পাড়া এলাকায়৷
নিহত যুবকের নাম মহম্মদ মিজানুর রহমান৷ বয়স ২৬ বছর৷ পেশায় প্যান্ডেল মিস্ত্রি তিনি৷ বাড়ি জলাকান্দি গ্রামের উত্তরপাড়ায়৷ বাবা মহম্মদ আবুল হায়াত একসময় স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁকে কোনোদিন যুক্ত থাকতে দেখা যায়নি৷
আবুল হায়াত এদিন জানান, গতকাল এলাকায় একটি বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল তৈরি করতে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে৷ কাজ শেষ করতে অনেক রাত হয়ে যায়৷ সেই সময় গ্রামের মাদ্রাসা পাড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের একটি বৈঠক চলছিল৷ সেই বৈঠকে তৃণমূলিদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধে৷ এদিকে প্যান্ডেল তৈরির কাজ সেরে সেই সময়ই হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁর ছেলে৷ ঝামেলা দেখে কৌতুহলবশত তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ তখনই শাসকদলের ঝামেলায় গুলি চলতে শুরু করে৷ একটি গুলি লাগে তাঁর ছেলের মাথায়৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান৷ তা দেখে স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা কালিয়াচক থানায় খবর দেয়৷ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে৷ তখনও বেঁচে ছিলেন তাঁর ছেলে৷ ক্লাবের ছেলেরাই পুলিশের সাহায্যে তাঁর ছেলেকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়৷ তারপর ক্লাবের ছেলেরাই বাড়িতে এসে তাঁদের সেই খবর দেয়৷ তাঁরা তড়িঘড়ি মালদা মেডিকেলে ছুটে আসেন৷ রাতেই তাঁর ছেলেকে কলকাতা রেফার করে দেন মেডিকেলের চিকিৎসকরা৷ কিন্তু কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তাঁর ছেলে৷
আবুল সাহেবের সাফ কথা, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের শিকার হয়েছেন তাঁর ছেলে৷ তিনি কখনও রাজনীতি করতেন না৷ ছেলেই ছিল পরিবারের একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী৷ মিজানুরের অবর্তমানে তাঁদের সংসার কীভাবে চলবে জানেন না তিনি৷ এই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বলে তিনি জেনেছেন৷ তিনি তাদের কঠোর শাস্তি চান৷
যদিও এই ঘটনায় তৃণমূল কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন৷ তিনি বলেন, গতকাল রাতে পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাই নিয়ে জলাকান্দি গ্রামের মাদ্রাসা পাড়ায় দলীয় বৈঠক ভালোভাবেই শেষ হয়৷ ঠিক তখনই স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ তারা তৃণমূলের কেউ নয়৷ নেশা করে গুলি চালিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো, আর ছিনতাই, তোলাবাজি করাই তাদের কাজ৷ এই দুষ্কৃতীরাই সম্প্রতি কালিয়াচক থানার পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছিল৷ তাতে আহত হয়েছিলেন দুই পুলিশ অফিসার৷ সম্প্রতি এরা গুলি চালিয়েছিল সুজাপুর এলাকার তৃণমূল নেতা এসারুদ্দিন মণ্ডলের বাড়িতেও৷ তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, এই দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে মিজানুর নামে নিরীহ ওই যুবকের৷ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক৷ তিনিও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছেন৷
মোয়াজ্জেম সাহেবের সুরেই মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ৷ তিনি বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১২টা নাগাদ মিজানুর রহমান নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়৷ পরবর্তীতে তিনি মারা যান৷ এই ঘটনায় ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ তার মধ্যে এক অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক যোগ থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ স্থানীয় ইশ্যু৷ যে খুন করেছে তার বিরুদ্ধে আগেও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
ভিডিয়োঃ কৃতাঙ্ক
Comments