কৃষ্ণেন্দু-নীহারের তর্কাতর্কিতে ফের গরম ইংরেজবাজার পুরসভা
ফের একবার কৃষ্ণেন্দু-নীহারের বাদানুবাদে কেঁপে উঠল ইংরেজবাজার পুরসভা। আজ দুপুরে পুরসভায় ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের রিভাইস বাজেট পেশ করা হয়৷ কিন্তু সঠিক সময়ে পুর আইন মেনে কেন বাজেট পাশ করানো হল না তা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি৷
পুরভোটের সময় এসে গেছে। যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে ভোটের দিনক্ষণ। আবার আগামী মাসের ৪ তারিখ সাংগঠনিক বৈঠক করতে জেলায় আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তৃণমূল সুপ্রিমো মালদায় এসে তাঁর দলের দুই শিবির নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন, তার দিকেই তাকিয়ে আছে জেলার রাজনীতি মহল। ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষের রিভাইস বাজেট পেশের মিটিং চলাকালীন আজ ইংরেজবাজার পুরসভায় বিতর্ক দেখা দেয় শাসকদলের দুই শিবিরে৷ বর্তমান চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে আবার বেআইনি কাজ করার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি৷ এনিয়ে আজকের মিটিংয়ে বাকবিতণ্ডাও হয়৷ যদিও বর্তমান চেয়ারম্যানের সাফ কথা, তিনি যা করেছেন, সরকারি নির্দেশ মেনেই করেছেন৷
কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি, ইংরেজবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান
“গত মার্চ মাসে ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করা হয়েছিল৷ পুর আইন অনুযায়ী বাজেট পেশের দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই সম্পর্কিত আলোচনা সারতে হয়। কিন্তু এখানে আইন মানা হয়নি৷ আইন অনুযায়ী সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিভাইস বাজেট পেশ করতে হত৷ কিন্তু চেয়ারম্যান হঠাৎ আজ রিভাইস বাজেট পেশ করলেন এখানে৷ আমরা এই বিষয়টি তাঁর কাছে এবং পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারের কাছে জানতে চাই৷ আমার বক্তব্য, আইন মেনে কোনও কাজ না হলে তাকে দুর্নীতিই বলা হয়৷ এটা নিশ্চিত দুর্নীতি৷ কী উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান এই বেআইনি কাজ করলেন, তা তিনিই বলতে পারবেন৷”
জানা গেছে, পুরসভায় গত বছরের মার্চ মাসে ২০০ কোটি ১০ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করা হয়। বাজেটের টাকা বাড়বে না কমবে তা জানান হয় রিভাইস বাজেটে। আজ দুপুর দুটোর সময় পুরসভায় সেই বাজেটের রিভাইস ফরম্যাট পেশ করেন চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ। জানা গেছে, পেশ হওয়া এই বাজেটে পূর্ব নির্ধারিত টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা বাড়িয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নীহাররঞ্জন ঘোষ, ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান
“পুরসভায় কোনও বেআইনি কাজ করা হয়নি৷ এটা রিভাইস বাজেট৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সঠিক সময় বাজেট পুরসভায় পেশ করা হয়েছিল৷ কিন্তু সেই বাজেট নিয়ে আমরা আলোচনা করার সুযোগ পাইনি৷ তার দু’দিন পরেই লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়৷ আমরা এই বিষয়টি রাজ্য পুর দপ্তরে জানিয়েছিলাম৷ নিয়ম অনুযায়ী বাজেট পেশের নয় মাস পর ওই বাজেটের ট্রেন্ড দেখতে হয়৷ অর্থাৎ পেশ হওয়ার নয় মাসের মধ্যে সেই বাজেট কী অবস্থায় রয়েছে৷ সেই ট্রেন্ডের উপর রিভাইস বাজেট তৈরি করতে হয়৷ রিভাইস বাজেট পাশ করানোর কোনও প্রয়োজন নেই৷ ডিসেম্বর মাসে পুরসভার অডিট চলছিল৷ সেই বিষয়টিও আমরা রাজ্য পুর দপ্তরে জানাই৷ পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে আমাদের জানানো হয়, এই পুরসভার মূল বাজেট অনুমোদিত হয়েছে৷ অডিটের জন্য ডিসেম্বর মাসে যে রিভাইস বাজেট পেশ করা যায়নি, তা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পেশ করতে হবে৷ সেই নির্দেশ মতো আজ আমরা সেই রিভাইস বাজেট পেশ করেছি৷ ২৫ জন কাউন্সিলর আজকের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একমাত্র পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান কাউন্সিলর আপত্তি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন৷ কিন্তু আইন মেনে তিনি কোনও কথা বলছেন না৷”
কৃষ্ণেন্দু-নীহারের বাদানুবাদে বিপাকে পড়েছেন দলের বাকি কাউন্সিলররা। তাঁরা জানালেন, বারবার এই ঘটনা ঘটলে শহরবাসী ভালো চোখে দেখবে না বিষয়টি। দলের জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে ইংরেজবাজার পুর এলাকার ২৯টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি৷ এই দ্বন্দ্ব যেন আর না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে জেলা সভাপতিকে। জেলার তৃণমূল সভাপতি মৌসম নূর জানিয়েছেন, দুপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে। (#MunicipalityElection)
Comments