মেয়েকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স থেকে সরিয়ে নিলেন মালদা কলেজ অধ্যক্ষ
নিজের এবং কলেজের সম্মানের প্রশ্নে মেয়েকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স বিভাগ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মালদা কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম সরকার৷ উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই তাপস চৌধুরি নামে এক ছাত্র গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দায়ের করা এক অভিযোগপত্রে জানান, মালদা কলেজের অধ্যক্ষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের মেয়েকে ওই কলেজের পদার্থবিদ্যা অনার্স বিভাগে ভর্তি করেছেন৷ কলেজ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পদার্থবিদ্যা অনার্সে ভর্তি হতে গেলে কমপক্ষে ৮৫.৫০ শতাংশ নম্বর প্রয়োজন৷ কিন্তু অধ্যক্ষের মেয়ে নাতাশা সরকার ৮৩.৩৩ শতাংশ নম্বর পেলেও তাঁকে মালদা কলেজে পদার্থবিদ্যা অনার্সে ভর্তি নেওয়া হয়েছে৷ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই বেআইনি কাজের অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করার জন্য উপাচার্যকে আবেদন জানান ওই ছাত্র৷
এদিকে সেদিনই ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ কলেজের প্রশাসক তথা জেলাশাসকের কাছেও একটি অভিযোগপত্র জমা দেন৷ যদিও বৃহস্পতিবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ৷ উত্তমবাবু জানান, মালদা কলেজের গভর্নিং বডির রেজুলেশন মেনেই তাঁর মেয়েকে পদার্থবিদ্যায় অনার্সে ভর্তি করা হয়েছে৷ রেজুলেশন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আসনের পর একটি আসনে কলেজের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর ছেলেমেয়েকে ভর্তি করা যেতে পারে৷ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেই রেজুলেশন চলে আসছে৷ গতবছরও এই রেজুলেশন অনুযায়ী ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছিল৷ সেই রীতি মেনেই তাঁর মেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে৷
যদিও এই ঘটনায় জেলার বিভিন্ন মহলে অধ্যক্ষকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় ৷ এতে যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়েন উত্তমবাবু৷ তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েন৷ এদিনও তিনি অসুস্থ ছিলেন৷ তিনি জানান, মেয়েকে কলেজে পদার্থবিদ্যা অনার্সে ভর্তি করে তিনি যে কোনও বেআইনি কাজ করেননি তা তিনি জানেন৷ তবুও এই ঘটনায় নিজের এবং কলেজের সম্মানের কথা ভেবে তিনি মেয়েকে ওই বিভাগ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তাঁর মেয়ে মেধার ভিত্তিতে তালিকায় ঠাঁই পেয়ে ইতিমধ্যেই কলেজে বোটানি অনার্সে ভর্তি হয়েছে৷ সে সেখানেই পড়াশোনা করবে৷ পরবর্তীতে কোনও কারণে পদার্থবিদ্যার মেধা তালিকা অনুযায়ী সুযোগ পেলে সে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করবে৷ তিনি কখনও বেআইনি কাজ করেননি, বেআইনি কাজকে প্রশ্রয়ও দেন না৷ তাঁর কাছে নিজের এবং কলেজের সম্মান বড়ো বিষয়৷ সেকারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ নিজের সিদ্ধান্তের কথা তিনি এদিনই কলেজের প্রশাসক তথা জেলাশাসককে জানিয়ে দেবেন৷
এদিকে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উঁচুস্তরের আধিকারিক এক ছাত্রের জন্য মালদা কলেজের অধ্যক্ষকে কোনও এক বিষয়ে অনার্সে ভর্তির সুপারিশ করেন৷ ওই আধিকারিক অধ্যক্ষকে বলেন, তিনি যেন ছাত্রটির হয়ে একটি সুপারিশপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেন৷ সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ওই ছাত্রটিকে মালদা কলেজে ভর্তি করে নেওয়ার অনুমোদন দিয়ে দেবে৷ কিন্তু অধ্যক্ষ নাকি পত্রপাঠ ওই ছাত্রকে বিদায় করে দেন৷ তিনি তাঁকে জানিয়ে দেন, আইন বহির্ভূত উপায়ে তিনি কাউকে ভর্তি করতে পারবেন না৷ তার ক’দিন পরেই জনসমক্ষে আসে নাতাশার কাহিনি৷ তাই এই ঘটনার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের একাংশের হাত দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ৷ এনিয়ে উত্তমবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এবিষয়ে তিনি কিছু জানেন না৷ নিজের অধিকারের বাইরে তিনি কিছু বলতেও পারবেন না৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments