ডালে ডালে বোল বার্তা
৩২৭ খ্রীষ্টপূর্বে সিন্ধু উপত্যকায় আলেকজান্ডারের নজরে পড়েছিল আমবাগান৷ তখনই রসাল এই ফলের মহিমা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনি৷১৩৩০ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত কবি আমির খুসরো আম নিয়ে লিখে ফেলেছিলেন একটি কবিতাই৷ নিজের রাজত্বকালে আকবর তাঁর বাগানে এক লক্ষ আমগাছ লাগিয়েছিলেন৷ সুতরাং সংস্কৃত আম্র যে কীভাবে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে, তা বোধহয় আর কাউকে বলে দিতে হবে না৷ প্রাচীন সেই ফলের চাষ এখনও স্বমহিমায়৷ ইন্দো-বার্মা রিজিয়নই এই ফলের জন্মভূমি বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা৷তবে বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই আমের চাষ হয়৷এদেশের অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, বিহার, কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেই মূলত আমচাষ হয়ে থাকে৷আম গ্রীষ্মকালীন ফল৷যদিও তার উৎপাদনের শুরু হয় শীতের শেষ থেকেই৷
কিন্তু এবার শীত বিদায় নিতে নিতেও যেন নিচ্ছে না৷ শীতের দীর্ঘ ইনিংস কেড়ে নিতে শুরু করেছে এই জেলার আমচাষিদের ঘুমের স্থায়িত্ব৷
মাঘ মাসের মাঝামাঝিতেও যদি দিনে গরমের ভাব না হয়, তবে তা নিশ্চিতভাবে আমচাষের পক্ষে দুঃসংবাদ৷ এখনও সেভাবে জেলায় শুরু হয়নি পশ্চিমা বাতাসের দাপট৷এই দুইয়ের স্পর্শেই ঘুম ভাঙে আমগাছের মুকুলের৷তবে এখনও কিছুটা সময় রয়েছে৷সেই আশাতেই বেঁচে রয়েছেন আমচাষিরা৷ আম মালদা জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল৷বহুল ব্যবহারে ক্লিষ্ট একটি বাক্য৷কিন্তু সেই বাক্যই কার্যত বাঁচিয়ে রেখেছে জেলার অর্থনীতিকে এবং সেই অর্থনীতির জোরেই প্রতিবছর একটু একটু করে বাড়ছে আম চাষের জমির পরিমাণ৷ জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর জেলার মোট ৩০ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল৷ এবছর চাষযোগ্য জমির পরিমাণ আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে৷ বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে আম চাষের পরিমাণ বাড়ায় তথাকথিত অফ ইয়ার আর অন ইয়ারের পার্থক্য কমতে শুরু করেছে৷
জেলা উদ্যালপালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, শীতের শেষের দিকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় আমের মুকুল উঁকি দিতে শুরু করেছে৷ তবে সমস্ত গাছে মুকুল আসতে এখনও দেরি রয়েছে৷গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা বাতাস শুরু হলে মুকুল বেরোনোর পরিমাণও বাড়বে৷ সাধারণত ২২ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস মুকুল বেরোনোর পক্ষে উপযুক্ত তাপমাত্রা৷ গত বছর জেলায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল৷এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এখনও ঠিক হয়নি৷মুকুলের অবস্থা দেখার পরেই সেই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হবে৷রাহুলবাবু আরো জানান, এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের পক্ষে উপযুক্ত রয়েছে৷তাই আশা করা যায়, এবছর জেলায় আমের উৎপাদন গতবারের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাবে৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments