ধুলোয় মিশছে উইলিয়াম কেরির নীলকুঠির ইতিহাস
বাংলায় শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন উইলিয়াম কেরি। বাংলাভাষায় প্রথম ছাপা বই প্রকাশ তাঁর হাত ধরেই। হুগলির শ্রীরামপুর থেকে সেই বই প্রকাশিত হলেও সেই বই প্রকাশের মুদ্রণযন্ত্র প্রথমে নিয়ে আসা হয়েছিল মালদায়। দুর্ভাগ্যবশত মালদা থেকে প্রথম বাংলা ছাপা বই হয়নি। উইলিয়াম কেরির একাধিক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে মদনাবতীর নীলকুঠির সঙ্গে। তবে তাঁর সেই নীলকুঠির অস্তিত্ব আজ নেই বললেই চলে। ১১ একর জমির উপর থাকা কুঠির বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে। কুঠির দেওয়াল ভেঙে ইট নিয়ে নেওয়া হয়েছে, কেটে ফেলা হয়েছে কুঠিতে থাকা সমস্ত গাছ। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন জেলার ইতিহাসবিদরা।
১৭৬১ সালের ১৭ অগস্ট ইংল্যান্ডের পশ্চিম নর্দাম্পটনশায়ারের পাউলার্স পিউরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন উইলিয়াম কেরি। ১৭৯৩ সালের ১৩ জুন কেরি ইংল্যান্ড থেকে সপরিবারে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় ৬ মাস সমুদ্রযাত্রার পর কলকাতায় এসে পৌঁছন তাঁরা। কেরি খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচারক ছিলেন তবে আর্থিক সমস্যার কারণে সেই সময় তিনি নীলকুঠির ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন। পরের বছর ১৫ জুন মালদার মদনাবতী গ্রামে চলে আসেন তিনি। নীলকুঠির দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি তিনি এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি সমস্ত কিছুতেই ওই গ্রামের মানুষের পাশে ছিলেন কেরি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলার মানুষকে খ্রিষ্ট ধর্মে অনুরাগী করতে হলে বাইবেলকে বাংলা ভাষায় মানুষের সামনে আনতে হবে। এই ভাবনা থেকেই তিনি ইংল্যান্ড থেকে কাঠের এক মুদ্রণ যন্ত্র মদনাবতী কুঠিতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেই যন্ত্র নিয়ে আসার সময় বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায় সেই মুদ্রণ যন্ত্রে। সেই যন্ত্র সারাইয়ের মতো কোনও কারিগর এই এলাকায় তিনি খুঁজে পাননি। অবশেষে ১৭৯৮ সালে কলেজের অধ্যক্ষের চাকরি পেয়ে তিনি মালদা থেকে হুগলির শ্রীরামপুরে পাড়ি দেন।
মালদার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মোহম্মদ আতাউল্লাহ জানান, আর্থিক সংকটের জন্য মাসিক ২০ টাকা বেতনে উইলিয়াম কেরি নীলকুঠির চাকরি নিয়েছিলেন। তবে তাঁর প্রধান কাজ ছিল ধর্ম প্রচার করা। তাই তিনি বাইবেলের বাংলা সংস্করণ মুদ্রণ করার চিন্তাভাবনা করেন। তিনি মদনাবতীতে একটি মুদ্রণ যন্ত্র সহ সব উপকরণ নিয়ে এসেছিলেন। কম্পোজার, মেশিন চালকও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এখানে সেই যন্ত্র চালু করা যায়নি। পরে শ্রীরামপুরে সেই যন্ত্রেই প্রথম বাংলা ভাষায় বই ছাপানো হয়। তাঁর সেই কুঠি বর্তমানে মাটিতে মিলিয়ে গিয়েছে। বিষয়টি দুঃখের। কেরি এখানে একটি আবাসিক স্কুলও চালু করেন। এসব রক্ষা করতে বহুবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে এখন শোনা যাচ্ছে সেখানে নাকি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments