অনলাইন অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার মালদা কলেজে
শুক্রবার থেকে মালদা কলেজে শুরু হচ্ছে অনলাইন অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার। তবে শুধু পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষকদেরও এই আওতায় আনা হয়েছে। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে এই উদ্যোগ। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে শিক্ষক ও পড়ুয়া উভয়েই স্বাগত জানিয়েছেন।
ক্লাসে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি রাখতে রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে মালদা কলেজ৷ অনলাইন অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার, এই নতুন বিষয়টি মালদা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট সেলের (আইকিউএসসি) কো-অর্ডিনেটর ডঃ মানসকুমার বৈদ্যের মস্তিষ্কপ্রসূত৷ এদিন তিনি বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে শিক্ষকরা নিজেদের মোবাইল ফোনে ক্লাসে পড়ুয়াদের উপস্থিতি গ্রহণ করবেন৷ সেই উপস্থিতির সম্পূর্ণ বিষয়টি তিনি কলেজের মূল কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেবেন৷ মনিটারিং সিস্টেমে সেই উপস্থিতি কলেজের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হবে৷ এতে পড়ুয়ারা যেমন কে কত সংখ্যক ক্লাস করেছেন তা জানতে পারবেন, তেমনই শিক্ষকরা কে সপ্তাহে কত সময় ক্লাসে ছিলেন তাও জানতে পারবেন৷ নিয়ম অনুযায়ী কোনও কলেজে একজন পার্ট টাইম শিক্ষককে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৪টি ক্লাস নিতে হয়৷ সহকারী প্রফেসর ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরদের ক্ষেত্রে তার সংখ্যা যথাক্রমে ২৪ ও ২০৷ শুধু তাই নয়, অভিভাবক, পড়ুয়ারা সকলেই কলেজের ওয়েবসাইটে এই রেজিস্টার দেখতে পাবেন৷
মানসবাবু আরও জানান, এই পদ্ধতিটি গুগল সার্ভিসকে পরিমার্জন করে তৈরি করেছেন তিনি৷ এর জন্য তাঁদের কোনও খরচ নেই৷ গত এপ্রিল মাস থেকে এনিয়ে কাজ করছেন তিনি৷ গোটা বিষয়টি কলেজের প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকাকে জানিয়েছেন৷ কীভাবে এই পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের অ্যাটেনড্যান্স নিতে হবে তা সবাইকে হাতেকলমে শেখানো হয়েছে৷ শিক্ষকরা প্রত্যেকেই এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ এই অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টারের জন্য প্রত্যেক শিক্ষককে আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দেওয়া রয়েছে৷ সেই পাসওয়ার্ডে তিনি অবশ্য শুধুমাত্র নিজের ক্লাসের উপস্থিতিই আপলোড করতে পারবেন৷ প্রথমদিকে কিছুজনের অসুবিধে হতে পারে ভেবে তাঁরা শুরুর দিকে দু’ধরণের অ্যাটেনড্যান্সই বজায় রাখছেন৷ ভবিষ্যতে খাতায় উপস্থিতি তুলে দেওয়া হবে৷ তবে কলেজে এই পদ্ধতি চালুর জন্য অধ্যক্ষ চিন্ময় সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷
অধ্যক্ষ জানান, মালদা কলেজে এই মুহূর্তে ১০৮টি রেজিস্টার চালু রয়েছে৷ অধ্যক্ষের পক্ষে প্রতিদিন অত রেজিস্টার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা সম্ভব নয়৷ কিন্তু অনলাইন রেজিস্টার চালু হলে মাউসের এক ক্লিকেই সব দেখা যাবে৷ পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ ক্লাস করা আবশ্যিক৷ অনলাইন রেজিস্টারে কোনও পড়ুয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা সেই পড়ুয়াকে সতর্ক করতে পারবেন৷ শুধু তাই নয়, শিক্ষকরাও নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস করতে পারছেন কিনা, কোনও কারণে ক্লাস না নেওয়া গেলে তার পিছনে কী কারণ, সবই এই পদ্ধতিতে জানা যাবে৷ চিন্ময়বাবু বলেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কোনও কলেজে এই পদ্ধতি চালু হয়নি৷ সেদিক থেকে তাঁরা রাজ্যে পথিকৃৎ৷
কলেজ কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন পড়ুয়ারাও। এক পড়ুয়া সুমিতা রাজবংশী বলেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তাঁরা কলেজে আসেন৷ কিন্তু যদি তাঁরাই নিয়মিত ক্লাস না করেন তবে শিক্ষকরা তাঁদের কী শেখাবেন? তাই কলেজের এই নতুন পদ্ধতিকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন৷ এতে পড়ুয়ারা সবাই নিজেদের উপস্থিতির বিষয় নিয়ে পরিষ্কার হতে পারবেন৷ শিক্ষিকা সংঘমিত্রা সিনহাও অনলাইন অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার সিস্টেমকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, গতবছরও দর্শনের তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম ছিল৷ কিন্তু এবার নতুন পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতি বাড়বে বলেই তিনি মনে করছেন৷ তার উপর এই পদ্ধতি রাজ্যে প্রথম মালদা কলেজেই চালু হতে যাচ্ছে৷ এতে তিনি গর্বিত৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments