শুধুমাত্র মহিলারাই মায়ের পিণ্ডদান করেন এখানে
মালদা জেলার গৌড়ে অবস্থান প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব তীর্থ রামকেলি গ্রামের। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি তিথিতে চৈতন্যদেবের আগমনকে স্মরণ করে চার দিন ব্যাপী রামকেলি উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এই রামকেলি মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল মাতৃ পিণ্ডদান। রামকেলি গ্রামের নিকটে গৌড়ের প্রসিদ্ধ ফিরোজ মিনার অবস্থান করছে। এই ফিরোজ মিনারের পশ্চিম দিকে আম বাগানের মধ্যে আছে গয়েশ্বরী মন্দির। কেউ কেউ আবার একে গৌড়েশ্বরী বলে অভিহিত করে থাকেন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী এই জায়গাটিকে আগে বলা হত বামন পাড়া। যদিও কথিত আছে যে, আসল মন্দির নবাবী আমলে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, মূল মন্দির গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মন্দিরে পাথরে খোদাই করা একটি চতুর্ভুজ দেবী মূর্তি আছে যাকে গয়েশ্বরী বা গৌড়েশ্বরী বলে অভিহিত করা হয়। আর এই মন্দিরে হয় মাতৃ পিণ্ডদান।
বলা বাহুল্য ভারতবর্ষের আর কোথাও এই মাতৃ পিণ্ডদান হয় না।
এখানে মূলত: মহিলারাই মায়ের পিণ্ডদান করে থাকেন। কোনও পুরুষ পিণ্ডদান করেন না। যারা পিণ্ডদান করেন তারা মূলত: অবাঙালি নিম্নবর্গীয় সমাজের মানুষজন। এদের অধিকাংশই বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন। এই পিণ্ডদানের পুরোহিতরা প্রধানত বিহারি সমাজের পুরোহিত। পিণ্ডদান করার পর সেই পিণ্ডটি নতুন বস্ত্রখণ্ডে মুড়িয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের জলে ফেলে দেওয়া হয়। এরপরে পিণ্ডদানকারী মহিলা মন্দিরের ছাদে গিয়ে ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বলন করেন পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে। মন্দির চত্বরে তৈরি করা নকল নদী অর্থাৎ বৈতরণী পার হন পিণ্ডদানকারী মহিলাগণ। এরপরে তাঁরা গৌড়েশ্বরী বা গয়েশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে দুপুরে মন্দিরের অন্নভোগ গ্রহণ করেন।
মন্দিরের সেবায়েত বিশ্বনাথ মণ্ডল জানান, এই পিণ্ডদান কেবলমাত্র রামকেলি মেলার সময়ই হয়, অন্য সময় হয় না। মূলত: সকাল পাঁচটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত পিণ্ডদান চলে। তিনি জানান, ধীরে ধীরে এই মন্দিরে পিণ্ডদানকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে মন্দিরের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ যেমন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বর্তমান যুগের সঙ্গে সমাজ পরিবর্তন করছে, সেই সঙ্গে মানসিক দিক থেকে এখনও সেই প্রাচীন পদ্ধতিকে নিজেদের বিশ্বাস ও ভক্তির মাধ্যমে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছে। গয়েশ্বরী মন্দিরের মাতৃ পিণ্ডদান তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
Kommentare