কালিয়াচকে প্রতীক বেচছেন তৃণমূল চেয়ারম্যান!
‘টাকা নিয়ে প্রতীক দিচ্ছেন কালিয়াচক ব্লক তৃণমূলের চেয়ারম্যান আবু নাসার খান চৌধুরি৷’ এমনটাই অভিযোগ করছেন জালুয়াবাথাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি। তাঁর আরো অভিযোগ, ‘লেবুবাবু আমাকে বলেছিলেন, ২ লক্ষ টাকা দিলে আমাকে প্রতীক দেবেন৷ গতকাল যখন লেবুবাবুর সঙ্গে দেখা করি, তখন উনি আমার কাছে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা চেয়েছেন৷ আমাকে আজ সকালে লেবুবাবু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন৷ সেইমতো আমি সকালেই তাঁর বাড়িতে চলে আসি৷ কিন্তু এখানে আসার পর লেবুবাবুর আপ্ত সহায়ক আমাকে জানায়, এখন সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে না৷ আমি হাল ছাড়ব না৷ যতক্ষণ না প্রতীক পাই, ততক্ষণ লেবুবাবুর বাড়ির সামনে ধরনায় বসে থাকব৷ প্রতীক না পেলে আত্মহত্যা করব আমি৷ কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটো হওয়া আমি দেখতে পারব না৷’ দলীয় প্রতীক পাওয়ার জন্য এদিন সকাল থেকে কালিয়াচক ব্লক তৃণমূল চেয়ারম্যান আবু নাসার খান চৌধুরি ওরফে লেবু মিয়াঁর বাড়ির সামনে নিজের অনুগামীদের নিয়ে ধরনায় বসেছেন জালুয়াবাথাল অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ জিয়াউল চৌধুরি৷
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি জালুয়াবাথাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি৷ লেবুবাবুই তাঁকে সেই পদ দেন৷ এর আগে কংগ্রেস ও সিপিএমের মার খেয়ে তিনি ওই এলাকায় তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন৷ অঞ্চল সভাপতি হিসাবে তিনি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি বুথের মধ্যে ১৬টিতে দলের পক্ষে লাভজনক প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে লেবুবাবুর হাতে দিয়েছিলেন৷ প্রথমে সব ঠিকই ছিল৷ কিন্তু সময় যত গড়ায়, ততই প্রার্থী পদ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়৷ সিপিএম ও কংগ্রেস থেকে আসা লোকজনকে প্রার্থী করাতে তৎপর হন লেবুবাবু৷ এর পিছনে টাকার খেলাও রয়েছে৷ তাঁর কাছ থেকেও লেবুবাবু প্রথমে ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন৷ গতকাল তিনি সেই টাকা নিয়ে কোতয়ালির বাড়িতে আসেন তিনি৷ কিন্তু তখন লেবুবাবু তাঁর কাছে তাঁকে টিকিট দেওয়ার জন্য সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করেন৷ তিনি সেই টাকা দিতে পারেননি৷ লেবুবাবুর কথামতো এদিন সকালে তিনি ফের কোতয়ালি ভবনে আসেন৷ কিন্তু লেবুবাবু তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি৷ তাঁর অফিস বয় রাহুল তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে৷ তাঁর সঙ্গে লেবুবাবু দেখা করেননি৷ তাই তাঁরা সবাই তাঁর বাসভবনের সামনে ধরনায় বসেছেন৷ যতক্ষণ না তাঁদের দলীয় প্রতীক দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ তাঁরা ধরনায় থাকবেন৷ এর যদি তাঁদের প্রতীক না দেওয়া হয়, তবে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন৷ তার জন্য দায়ী থাকবেন লেবুবাবু৷ কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদনাম হতে দেবেন না তিনি৷
জিয়াউল সাহেবের কথাতেই অভিযোগ করেছেন আইনুদ্দিন শেখ৷ তিনি বলেন, এলাকার লোকজনের চাহিদা অনুযায়ী অঞ্চল সভাপতি তাঁকে ১৩৯ নম্বর বুথে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত করেন৷ তিনি নিজের মনোনয়নও জমা দিয়েছেন৷ সেই সময় লেবুবাবু সহ দলের সব নেতারাই অঞ্চল সভাপতির তালিকাকে মান্যতা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে লেবুবাবু অন্যান্য লোকজনকে দলীয় প্রতীক দিচ্ছেন৷ প্রতীক পেতে এদিন তাঁরা লেবুবাবুর বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছেন৷ প্রতীক না পেলে তাঁরা গ্রামে ফিরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন৷ কালিয়াচক ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৮ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী খাসিমুদ্দিন শেখ বলেন, প্রথমে তাঁর নাম নির্বাচিত হলেও পরে সিপিএম থেকে আসা একজনকে ওই আসনে টিকিট দিচ্ছেন লেবুবাবু৷ তাঁরও ধারণা, টাকার জন্যই অন্য দল থেকে আসা লোকজনদের দলীয় প্রতীক দিচ্ছেন লেবুবাবু৷
তাঁর বিরুদ্ধে এই ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠলেও হেলদোল নেই লেবু মিয়াঁর৷ এদিন সংবাদমাধ্যমের জন্যও তাঁর বাড়ির দরজা ছিল বন্ধ৷ দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করার পর ভিতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সাহেব এখন দিবানিদ্রায় ব্যস্ত৷ সন্ধের পর যোগাযোগ করতে হবে৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments