বাদবিতণ্ডায় ভেস্তে গেল পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলারের বৈঠক
ইংরেজবাজার পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাদবিতণ্ডায় ভেস্তে গেল পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলারের বৈঠক। শুধু তাই নয় পরিস্থিতি এমনই হয় বিরোধী দলনেতা নরেন্দ্রনাথ তেওয়াড়ি হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
শনিবার ইংরেজবাজার পুরসভায় বাজেট পেশের দিন বোর্ড অব কাউন্সিলারের বৈঠকে হাজির হন বিভিন্ন ওয়ার্ড়ের কাউন্সিলাররা। হাজির ছিলেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা নরেন্দ্রনাথ তেওয়াড়িও। প্রসঙ্গত ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলার বর্ণালি কুণ্ডু জাল নথি জমা দিয়ে গত পুরনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মামলাটি হাইকোর্টে চলার জন্য পুরবোর্ডের আজকের বৈঠকে এই কাউন্সিলারের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুবাবু। এরপরই শুরু হয়ে যায় বাদবিতণ্ডা। তৃণমূল কংগ্রেসের এই দুই নেতার এমন লড়াইয়ে কার্যত ভেস্তে যায় আজকের বৈঠক। পরিস্থিতি এমনই হয় তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও দুই নেতার লড়াইয়ে শাসক-বিরোধীর লড়াই এর মতন পরিস্থিতি হয়। এমন অবস্থায় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বাবলা সরকার ও বিরোধীদল নেতা নরেন্দ্রনাথ তেওয়াড়ির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আজকের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি অভিযোগ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন বর্ণালি হালদারের কাউন্সিলার পদটি খারিজ করে দিয়েছে, সেই কারণে তিনি পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলার মিটিং-এ থাকতে পারেন না। কিন্তু এখানে তাঁকে উপস্থিত করানো হয়েছে। আর এর বিরোধিতা করে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা কাউন্সিলাররা প্রতিবাদ জানান। এছাড়াও পুরসভার বিভিন্ন কাজের কোনো হিসাব নেই, নর্দমাগুলি পরিষ্কার করা হয়না। সেই সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবু আরও অভিযোগ করে বলেন এই পুরপ্রধান তৃণমূল কংগ্রেস দলের নয়, তাঁরাই প্রকৃত তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমান পুরপ্রধান নীহারবাবু কংগ্রেস ও সিপিএমের সমর্থনে জেতা নেতা যিনি এখন আমাদের মতো আট-নয়জন কাউন্সিলারদের উপর বুলডোজার চালাচ্ছেন, যা তিনি হতে দেবেন না।
এদিকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির অভিযোগের জবাবে বর্তমান পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, কৃষ্ণেন্দুবাবু নোংরামি করার জন্য বাইরের বেশ কিছু লোককে দিয়ে মিটিং হাজিরা খাতায় সই করিয়ে নিয়েছেন। যারা পুরসভার কাউন্সিলার নয়। আইনের দ্বারা কিছুই করতে পারছেন না, সেই জন্য কৃষ্ণেন্দুবাবু আজ রাজনৈতিকভাবে এমন বাদবিতণ্ডার সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনি আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করছেন, আর কে তৃণমূল কংগ্রেস আর কে তৃণমূল কংগ্রেস নয় সেটা দেখার আগে উনি সিপিএমের বেঞ্চে বসেছেন। এর থেকে বলা যেতে পারে উনি তৃনমূলের দলে বসছেন না। তাই তিনি তৃণমূল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে।
এদিনের এই বচসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বাবলা সরকার জানান, এদিন পুরসভার বাজেট পেশ ছিল এবং তা সম্পূর্ণও হয়েছে। তবে একটা ব্যক্তিগত বির্তক হয়েছিল যার চিঠি কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির কাছে রয়েছে। যদিও সেটা তাদের হাতে আসেনি। যাকে নিয়ে বিতর্ক সেই কাউন্সিলার হাইকোর্টে আপিল করেছেন। যার কপিতে বোর্ড অব কাউন্সিলারে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। আর এই পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান ওই কাউন্সিলারকে ডেকেছিলেন যা নিয়েই বির্তক।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা নরেন্দ্রনাথ তেওয়াড়ি জানান, এদিন পুরসভার বাজেট পেশ ও মাসিক বৈঠক ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো কিছু না মেনেই বৈঠক ডেকেছিলেন। আর এটাই তাঁর প্রতিবাদ ছিল। মালদা সফরে এসে দলনেত্রীর নির্দেশের পরও মালদা জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্ন্দন্দ্ব আজও অব্যহত। আজকের ঘটনা তেমনই প্রমাণ করে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এরই প্রভাব দেখা যাবে কিনা এখন সেটাই দেখার।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Kommentare