চির তুষারের যাত্রা পথে মালদার আলোকিত মণি
মালদা জেলার শিক্ষা-সংস্কৃতি, আদর্শ, নিষ্ঠা, সহৃদয়তার জগত অন্ধকার করে চলে গেলেন আমাদের সকলের প্রিয় মণিদা-মণি স্যার – তুষারকান্তি ঘোষ।
এই মানুষটাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি কখনও, কখনও দূর থেকে দেখেছি তাঁর আরও কাছের মানুষ হয়ে। এই জেলা মালদাকে তিনি যে কতটা ভালোবাসতেন সেটা তাঁর বই পড়লেই বোঝা যায়, জানা যায়। আরও ভালো জানা যায় তাঁর কাছে দুদণ্ড বসলে, এক নিবিড় স্নিগ্ধতা, এক অপাপবিদ্ধ অনুভূতির স্পর্শ পাওয়া যায় তাঁর প্রত্যেকটি কথা প্রত্যেকটি অনুভব থেকে। যখন তিনি পড়াশুনার কথা বলেন তখন বোঝা যায় কতখানি পড়াশুনা তাঁর করায়ত্ত। যখন তিনি উপলব্ধির কথা বলেন তখন বোঝা যায় অন্তরের কোন গহন দেশ থেকে সেই উপলব্ধির নির্যাস সেটি। ঈশ্বর বিশ্বাস তাঁকে আচার সর্বস্ব মানুষ নয় মানবধর্মে বিশ্বাসী এক যথার্থ মানুষে রূপান্তরিত করেছিল, যা দুর্লভ, যা দুষ্প্রাপ্য, যা অজানা খনির মণির মতই অলভ্য। এ কোনো অত্যুক্তি নয়, যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, যারা তাঁর সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছেন সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন। এই জেলার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হল অনেকখানিই, এই মুহূর্তে নিজেকে অভিভাবকহীন, আশ্রয়হীন বলে মনে হচ্ছে। তুষারদা যেখানেই থাকুন, আপনার জ্ঞানের আলো, প্রজ্ঞার জ্যোতি থেকে আমরা যেন কখনও বঞ্চিত না হই।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে মালদা মেডিকেল কলেজে মৃত্যু হল বঙ্গরত্ন ডঃ তুষারকান্তি ঘোষের। তাঁর জন্ম ১৬ জুলাই ১৯৪৪ সালে। শিক্ষাজীবন কেটেছিল মালদা জিলা স্কুল, মালদা কলেজ ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে ললিতমোহন স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার গুরুদায়িত্ব বহন করেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর প্রায় দেড়শত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই, শ্রী চৈতন্যের ভক্তি আন্দোলনে রামকেলি ও তার বৈষ্ণব সমাজ, সপ্তপর্ণী, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শতবর্ষ পূর্তি ও জাতীয় কর্তব্য, অমলিন স্মৃতি যেথা, স্বদেশী আন্দোলন ও বাংলা সাহিত্য, বিনয় সরকার নির্বাচিত রচনা সংকলন, ভারততীর্থে রবীন্দ্রনাথ।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Commentaires