শীতল সৌধগুলিতে পর্যটকের দাবি তুলছে মালদাবাসী
মালদার ইতিহাসটা সত্যিই বড্ড পুরোনো৷ ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৌর্য যুগের ইতিহাসে গৌড় ও পাণ্ডুয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়৷ সেই সময় এই দুই জায়গাকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল পৌণ্ড্রবর্ধন৷ মৌর্যদের হাত থেকে এই রাজত্ব যায় গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজাদের হাতে৷ কালক্রমে এই রাজত্বের অধিকারী হন রাজা শশাঙ্ক৷ অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এখানে রাজত্ব করেন পাল বংশের রাজারা৷ তাঁদের পরবর্তী সময় গৌড়ের রাজত্ব যায় সেন বংশের হাতে৷ শেষ পর্যন্ত ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি বাংলা দখল করেন৷ এরপর থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম শাসকরাই গৌড়ে রাজত্ব করেছেন৷
কিন্তু এমন একটি ইতিহাস বিজড়িত জেলাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি৷ এখনও গৌড় একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিগণিত হতে পারেনি৷ জেলাবাসীর একাংশের অভিযোগ, এক্ষেত্রে কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের কোনো সদিচ্ছাই কোনোদিন দেখা যায়নি৷ শুধু গৌড় নয়, একই অবস্থা পাণ্ডুয়া, আদিনা কিংবা জগজ্জীবনপুরেরও৷ সেকারণেই নাকি ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে প্রাচীন ইতিহাসের এক বিশাল অংশ৷
অন্ধ ইতিহাসে দেহ আলো
একসময় রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইংরেজবাজারের বিধায়ক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি৷ তাঁর মন্ত্রী হওয়ার খবরে জেলাবাসীর মনে জেগেছিল নতুন আশা৷ সেই আশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন খোদ কৃষ্ণেন্দুবাবু৷ তাঁরই উদ্যোগ ইউনেসকোর একটি প্রতিনিধিদল মালদার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিতে পরিদর্শন করে৷ মন্ত্রী থাকাকালীন কৃষ্ণেন্দুবাবু পর্যটকদের কাছে মালদাকে আকর্ষণীয় করতে আরও কিছু উদ্যোগ নেন৷ প্রায় ৫ কোটি টাকায় গৌড়ের বারদোয়ারি ও আদিনা মসজিদে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের ব্যবস্থা করেন তিনি৷ পর্যটকদের থাকার জন্য গৌড়ে একটি সরকারি অতিথিশালা গড়ারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু৷ যদিও এর মধ্যেই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ মালদার আশা ফের তলিয়ে যায় গভীর জলে৷
গৌড়ের বারদোয়ারি ও আদিনা মসজিদে কয়েকদিন চালু ছিল লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম৷ সন্ধেয় রঙিন আলো আর সুরে দুই জায়গাতেই মায়াময় পরিবেশ তৈরি হত৷ শুধু মালদা কিংবা রাজ্য নয়, ওই ক’দিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই জেলায় উপস্থিত হয়েছিল পর্যটকের দল৷ কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা৷ প্রাচীন সৌধের ক্ষতি হবে জানিয়ে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ করে দেয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া৷ কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি গৌড় ও পাণ্ডুয়ার দুটি মসজিদে আমরা লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের ব্যবস্থা করেন৷ তিনি মন্ত্রী থেকে সরে যাওয়ার পর হঠাৎ শুনলেন, সেসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ সেই ব্যবস্থা ফের চালু করতে তিনি জেলাশাসক, রাজ্য পর্যটন দপ্তর ও পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন৷ কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷ তিনিও চান, ওই ব্যবস্থা আবার চালু হোক৷ পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ুক প্রাচীন ইতিহাসের ধুলোমাখা এই জেলায়৷
শুধু কৃষ্ণেন্দুবাবুই নন, এই আশায় বাঁচছেন আপামর মালদাবাসী৷ কেননা, এতে শুধু মালদার ইতিহাস নয়, নতুন কর্মসংস্থানের দৌলতে বাঁচবে জেলার বেকারের দলও৷ তাই এর জন্য সবাইকে বিরক্ত করা যেতেই পারে!
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Commentaires