চাঁচলে মহিলা কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ রাজ্য সরকারের
কণ্টকহীন হতে চলেছে উত্তর মালদার নারীশিক্ষা। এলাকার বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের আবেদনে সাড়া দিয়ে চাঁচলে মহিলা কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত এই মহিলা কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। তার জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে চাঁচলে পাঁচ একর জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসককে। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে উত্তর মালদার শিক্ষা মহলে এখন খুশির ঢেউ।
গৌড়বঙ্গের তিন জেলার মধ্যে বর্তমানে মাত্র দুটি মহিলা কলেজ রয়েছে। একটি মালদা শহরে, অন্যটি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। উত্তর মালদায় একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠছিল। কারণ, চাঁচল থেকে মালদা শহরের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। চাঁচল লাগোয়া উত্তর দিনাজপুরে কোনও মহিলা কলেজ না থাকায় এই এলাকার ছাত্রীরা সেখানেও যেতে পারতেন না। এদিকে প্রতিদিন মালদা শহরে যাতায়াত করাও তাঁদের পক্ষে অসুবিধেজনক। তাই তাঁরা এলাকাতেই একটি মহিলা কলেজের দাবি তুলেছিলেন। তাঁদের সেই আশা এবার পূরণ হতে চলেছে। গত ১০ অগস্ট শিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে চাঁচল সংসদীয় ক্ষেত্রে পাঁচ একর জমি মহিলা কলেজের জন্য চিহ্নিত করতে বলেছেন। সেকথা চাউর হতেই শোরগোল পড়েছে চাঁচল সহ গোটা উত্তর মালদায়।
বিধায়ক জানিয়েছেন, বিধানসভা চলাকালীন তিনি চাঁচল পুরসভা ও চাঁচলে মহিলা কলেজ স্থাপনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানান। সেদিন বিধানসভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মহিলা কলেজ অনুমোদন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দেন। তবে এই মুহূর্তে কিছু কারণে চাঁচল পুরসভা গঠন সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পুরসভা করা হবে। মহিলা কলেজ স্থাপনের জন্য গত ১০ অগাস্ট শিক্ষা দফতরের সচিব জেলাশাসককে পাঁচ একর জমি চিহ্নিত করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন। কলেজ নির্মাণের জন্য চাঁচলে জমির অভাব হবে না। প্রচুর সরকারি জমি রয়েছে। এলাকায় মহিলা কলেজ স্থাপনের জন্য স্থানীয়রাও নিশ্চিত সহযোগিতা করবেন। এখানে একটি মহিলা কলেজের খুব প্রয়োজন ছিল। হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, মালতিপুর এলাকার মেয়েদের মহিলা কলেজে পড়ার জন্য ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মালদা শহরে যেতে হত।
চাঁচলে মহিলা কলেজ নির্মাণের উদ্যোগে খুশি এলাকার শিক্ষা মহল। চাঁচল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পৃথা মজুমদার এর জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এতদিন এই এলাকার মেয়েদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মালদা মহিলা কলেজে পড়তে যেতে হত। এতে একদিকে সময়, অন্যদিকে টাকা খরচ হত। এই এলাকায় গরিব মানুষের বাস বেশি। এখানে মেয়েদের কলেজ হলে তারা এখানেই কলেজ লাইফ উপভোগ করতে পারবে।
সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা বর্ষা চৌধুরি জানাচ্ছেন, চাঁচলে মহিলা কলেজ হলে এলাকার মেয়েরা যেমন এলাকাতেই তাদের নিজস্ব কলেজে পড়তে পারবে, তেমনই তাদের অর্থও বাঁচবে। তিনিও এই সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। নতুন কলেজে মনমতো বিষয় পেলে সেখানেই পড়তে আগ্রহী সিদ্ধেশ্বরী ইন্সটিটিউশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আতিহা ফারহান হক।
স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক তমাল চক্রবর্তী জানান, চাঁচল মহকুমায় স্কুল-কলেজের বেশ অভাব। জানতে পেরেছি, রাজ্য সরকার এখানে মহিলা কলেজ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এলাকায় নারীশিক্ষার প্রসার ঘটবে। তবে এই এলাকায় মেয়েদের স্কুলের বড্ড অভাব। চাঁচলে একটিমাত্র মেয়েদের স্কুল রয়েছে। এলাকায় মেয়েদের আরও স্কুল খোলা হলে খুব ভালো হয়।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments