top of page

নতুন সন, আগ্রাসন, খেলা শুরু ‘2020 জীবন’

হিম হয়ে হাড়ে হাড়ে ঝরে যায় এই শীত, মেয়ের মুখে ভালোবেসে ছুড়ে দেয় কে অ্যাসিড? তারপরে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে... দেশলাই, খবরের শুরু আছে আগুনের শেষ নাই, বাতাস বয়ে আনে পোড়া মানুষের ঘ্রাণ, দাউ দাউ ডিসেম্বর পোড়া পৌষ অঘ্রান, জ্বলে গিয়ে অঙ্গার পুড়ে গিয়ে কার্বন, কার মেয়ে, কার মা, পুড়ে যায় কার বোন? বড়ো বড়ো মোমবাতি ছোটো ছোটো মিছিলে... তোমাদের শহরেও তুমি না কী ছিলে? বিক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রতিবাদী সত্তা অপরাধ ভয়ংকর সমাধান হত্যা, কুয়াশার মতো ধীরে, নামে সাদা অন্ধকার, এ ভারত অন্য তবু চোখ বন্ধ কার?



টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভারত, বিশ্বাস করে চূড়ান্ত সমাধান আর দ্রুত নিষ্পত্তিতে


বিচারের কাউন্টারে লম্বা লাইন পদ্ধতিও সেই টেস্ট ক্রিকেট মার্কা দীর্ঘমেয়াদী... বোরিং অতএব রোরিং জনগণকে আশ্বস্ত করার একটাই উপায় ছিল ‘এনকাউন্টার’, টুয়েন্টি টুয়েন্টি ছকে চালিয়ে খেলা... পুলিশ সেই কাজটাই করেছে৷জাতীয় সড়কের টোলপ্লাজার একশো মিটারের মধ্যে অতক্ষণ ধরে ঘটনা ঘটলো বা তারপরে বাড়ির লোকেরা যখন ডায়ারি করতে গেল, তখন এই থানায় না ওই থানায় বা দেখুন মেয়ে কার সাথে পালিয়েছে ইত্যাদি বলে শুরুতেই বাজে শট নিয়ে বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে এই ম্যাচ প্রায় হেরে যেতে বসেছিল টিম পুলিশ৷ কিন্তু দমাদ্দম গোটা চারেক ছয় মেরে খেলা ঘুরিয়ে দিল, ব্যাস দেশ জুড়ে সংবর্ধনা, আলপনা, শঙ্খধবনি, পুষ্পবৃষ্টি৷ একেই বলে গেম চেঞ্জার, আর এটাই টি 20 জীবনদর্শন আমরা ভারতবাসীরা অজান্তেই তাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি৷এই নতুন ভারত, টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভারত, বিশ্বাস করে চূড়ান্ত সমাধান আর দ্রুত নিষ্পত্তিতে, আর সেটা যে ভাবেই আসুক না কেন, বল কম রান অনেক বেশি৷ সময়ের খুব দাম, আর অত ধৈর্যই বা কার আছে, তাই গ্যালারির কথাও মাথায় রাখতে হয়৷ একটা উত্তেজনা একটা উন্মাদনা, একটা চমক, সবসময় একটা প্রদর্শনী, প্রদর্শনটাও যে সেখানে অন্যতম দর্শন৷ শিল্প সাহিত্য, সিনেমা, গান, নাটক, রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া সবেতেই কেমন যেন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ছক... ‘ধর তক্তা মার পেরেক, ফুটো হবেই ইঞ্চি দেড়েক’...৷ ঠিক এই সময়ে দরজায় যে সালটা কড়া নাড়ছে, না কড়া নাড়ছে না বরং হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে, অদ্ভুত সমাপতনে সেটাও টুয়েন্টি টুয়েন্টি৷ খ্রিস্টাব্দের ইতিহাসে সময়কে এমন যুতসই ধরতে পেরেছে আর কোন সাল সংখ্যা কে জানে? ক্যালেন্ডার হয়ে দেয়াল থেকে ঝুলবে, হাওয়ায় দুলবে 2020, প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেবে একটা মাইন্ড সেট, একটা জীবনদর্শন৷


সাবেকি ভারতের ভেতর থেকে এক নতুন 2020 ভারত থুড়ি ইন্ডিয়া তোমাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত...

ইয়ার টুয়েন্টি টুয়েন্টি এখনও আসতে দিন কয়েক বাকি, কিন্তু খেলা শুরু হয়ে গেছে৷ যে সকল ঘটনাবলী এই বছরকে মনে করাবে তার সবগুলোর মধ্যে টি 20 ছাপ প্রবল৷ নানা মাস্টারস্ট্রোক বল অনেক উঁচুতে, ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তালুবন্দি না ওভার বাউন্ডারি সময় বলবে, খেলা চলছে, গ্যালারি কিন্তু জ্বলছে...


কিছু অতীতজীবী জীবনে ও ক্রিকেটে টেস্ট ক্রিকেট বিলাসী, (টেস্ট ক্রিকেটটাও আজ দিনরাত, গোলাপি বল) পুরোনো আমলের ব্যাকরণ প্রকরণ পদ্ধতিকে ‘ধ্রুপদী’ বা ‘সাবেকি’ নাম দিয়ে যতই আগলে রাখতে চান না কেন কোনো লাভ নেই, পাটিগণিতের হিসেবে তারা নিতান্তই সংখ্যালঘু৷ এই ভারত শক্তিশালী, চালিয়ে খেলা ভারত, এইখানে সংখ্যাই শেষ কথা বলে৷ যাদের সংখ্যা নেই তাদের শঙ্কা আছে৷ তাদের জন্য সংখ্যা আর পাটিগণিত নিয়ে কার্ল স্যান্ডবার্গ অবলম্বনে এমন কিছু লাইন আওড়ে নেওয়া যেতে পারে... যেখানে সংখ্যা তোমার মাথার ভেতর থেকে বাইরে/ বাইরে থেকে ভেতরে/ পায়রার মতো উড়ে বেড়ায়/ সেখানেই পাটিগণিত/ পাটিগণিত তোমাকে বলে দেয়/ কতটা জিতলে বা হারলে/ অবশ্য যদি জানো সঠিক/ কতটা ছিল জেতা বা হারার আগে/ পাটিগণিত মানে সাত পাঁচ/ গায়ে লাগবে না আঁচ/ অথবা নয় ছয়/ আতঙ্ক আর ভয়/ ক্ষমতার পাটিগণিত খুব সরল/ যারা থাকলে, ক্ষমতা থাকবে/ তারা যোগ, তারা গুণ/ যারা থাকলে ক্ষমতা নাও থাকতে পারে/ তারা বিয়োগ, তারা ভাগ! তারা ভাগ!


অতএব বন্ধুরা পাটিগণিতের নিয়মে অগণিত সংখ্যাগুরুর সাথে মিশে যাও, চালিয়ে খেলো টি 20 জীবন, নিলামে চড়াও অতীতকে তারপর এই শীতে বেছে নাও জার্সির রং, সাবেকি ভারতের ভেতর থেকে এক নতুন 2020 ভারত থুড়ি ইন্ডিয়া তোমাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত৷


তবে কেউ কেউ আছে পাটিগণিতের ঊধের্ব, যেমন পাড়ার মোড়ের সেই পাগলটা, বছরের শুরুতে যে বলেছিল ‘২০১৯ সালটা আসলো বটে কিন্তু আসতে বড্ড দেরি হয়ে গেল, এতদিনে সভ্যতার স্কোর দু’হাজার না অন্তত চার হাজার উনিশ হওয়া উচিত ছিল, চালিয়ে খেলতে হবে ভাই...’, বছরের শেষে সে বেচারি চালিয়ে খেলার পরিণামে পড়েছে মহাফাঁপরে, ওর কোনো ধর্ম নেই, নেই কোনো কার্ড, তাই আজকাল পাড়ার মোড়ে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে ও বসে থাকে তাতে বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?’


ইলাসট্রেশনঃ মৃণাল শীল

Σχόλια


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page