top of page

‘তানাজি, দ্য আনসাং ওয়ারিয়র: অমর চিত্রকথার বলিউড ভার্সন

নাচ গান মারামারি আর ‘দেশপ্রেম’-এর পাঁচমিশেলি যে মাশালা পিরিয়ড পিস বানানোর ঐতিহ্য ইদানীং বলিউডে শুরু হয়েছে তাতে নবতম সংযোজন ‘তানাজি, দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’। পরিচালক ওম রাউত।


সতেরো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ। দিল্লীর মসনদে ‘বহিরাগত’ মোগলরা। উত্তর ভারতে ক্ষমতা দখলের পর দাক্ষিণাত্যে সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছেন ঔরঙ্গজেব। শিবাজিকে হারিয়ে মারাঠাদের তেইশটি দুর্গ দখলে নিয়েছে মোগলবাহিনী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন্ধানা গড়। দাক্ষিণাত্যে মোগল আগ্রাসন থামাতে কোন্ধানা গড় উদ্ধার করা জরুরি। এদিকে রাজমাতা জিজাবাঈ শপথ নিয়েছেন যতদিন না কোন্ধানা গড়ে আবার ‘ভাগওয়া’ ঝাণ্ডা উড়বে ততদিন তিনি জুতো পরবেন না, নগ্ন পায়ে থাকবেন।


Tanhaji Movie Review
তানাজি, দ্য আনসাং ওয়ারিয়র

শিবাজি তাই তাঁর বিশ্বস্ত সুবেদার তানাজিকে পাঠালেন গড় পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে কোন্ধানার ক্ষমতা কায়েম রাখতে বিশাল বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন ঔরঙ্গজেবের বিশ্বস্ত রাজপুত সেনাপতি উদয়ভান রাঠোর। মোগল বাহিনীর হাত থেকে কী করে প্রবল পরাক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ করে তানাজি সেই কেল্লা পুনরুদ্ধার করবে এই নিয়েই পুরো ছবি। ছবির ক্লাইম্যাক্স ভীষণ গতিময়। দর্শকদের অ্যাড্রেনালিন বাড়াবে। স্লো মোশনে কমব্যাট দৃশ্যের স্টাইলাইজেশন দর্শকদের তাক লাগাবে। বিগ বাজেটের এই ছবি, দর্শকদের ভিজুয়াল ফ্যান্টাসিকে তৃপ্ত করবে, এটা জানা ছিলই। কিন্তু বিরক্তি আসে ছবির দৈর্ঘ্যে, গানগুলো জোর করে ঠাসা মনে হয়।


গল্প একরৈখিক–মারাঠাদের আকাশছোঁয়া আদর্শ আত্মসম্মান আর গরিমা। কদিন আগেই মারাঠি জাত্যভিমান নিয়ে মুক্তি পেয়েছে আর একটি পিরিয়ড পিস-‘পানিপত’। যেখানে হর হর মহাদেব ধ্বনি শোনা গেছে বারংবার। এই ছবির সংলাপেও বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে হর হর মহাদেব আর ভাগওয়া তেজ।

মা ভবানীর বিশাল মূর্তি, হর হর মহাদেব ধ্বনি, মন্দির, তিলক, পুজো এবং গেরুয়া ঝাণ্ডা- ‘মর্দ’ মারাঠাদের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মোগলদের দেখানো হয়েছে ‘আদার’ বা ‘অপর’ হিসেবে। আলোকোজ্জ্বল রঙিন পরিবেশে মারাঠারা বর্ণময়। তুলনায় মোগলদের দেখানো হয়েছে অপেক্ষাকৃত অন্ধকার সেট-এ, কালো পোষাকে। মারাঠারা দেশপ্রেমিক বীরযোদ্ধা। মোগল বাহিনী ক্রূর বর্বর। উদয়ভান পাগলাটে, যেমন খুশি মানুষ মারে আর কুমিরের মাংস খায়।


উদয়ভানকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন সইফ আলি খান। তাঁর চোখেমুখে নৃশংসতা এবং চাতুর্য। তানাজির চরিত্রে অজয় দেবগন ভালো। নাটকীয় সংলাপে, অ্যাকশন দৃশ্যে, তেজী যোদ্ধার ভূমিকায় অজয়কে মানিয়ে গেছে। পতিব্রতা সাবিত্রীবাঈ-এর চরিত্রে কাজলের মাঝে মাঝে মারাঠা জাত্যভিমান নিয়ে কিছু গরম সংলাপ দেওয়া ছাড়া কিছু করার ছিলনা। শিবাজির ভূমিকায় শরদ কেলকার সুন্দর অভিনয় করেছেন, তাঁরও খুব বেশি কিছু করার ছিলনা।


বনশালির ‘পদ্মাবত’ হোক কিংবা গোয়ারিকরের ‘পানিপত’ অথবা ‘তানাজি’-বলিউডদুরস্ত এই পিরিয়ড পিসগুলোতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ‘হেজমনি’ জাঁকিয়ে বসেছে। এই হেজমনি-র জনপ্রিয়তার ভার আঁচ করেই চলচ্চিত্রকাররা ছবি নির্মাণ করছেন। নবলব্ধ হিন্দুত্বের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের টক্সিক মিশেল। গড় হিন্দুর চোখে মুসলমানরা বরাবর ‘আদার’। গত কয়েক বছরে এই ধারনা আরও পোক্ত হয়েছে। এই সুযোগে এই পপুলিস্ট পরিচালক এবং অভিনেতারা দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করছেন জিঙ্গো-জাতীয়তায়। এরাই বর্তমানে বিনোদনের নিয়ামক হয়ে উঠেছেন। এভ্রিডে কমিউনালিজম (প্রাত্যহিক সাম্প্রদায়িকতা) বলিউডে এখন নিও-নর্মাল।


জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের গ্রহণযোগ্যতায় ভর করে হিন্দুত্বের দিকচিহ্নগুলিকে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দিকে ঠেলতে শুরু করেছেন। ছবিগুলো দেশপ্রেমের মোড়কে, মুসলিমদের যাবতীয় সমস্যার মূল বলে দেগে দিচ্ছে এবং হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করছে। ভারতবর্ষের জাতীয় সমাজ এবং সংস্কৃতি বলতে ধরে নেওয়া হচ্ছে হিন্দু সমাজকেই। আমাদের সাংস্কৃতিক চৈতন্যে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জায়গা কোথায়! তারা অভারতীয়। দুঃখের বিষয় এই বলিউডি মূলধারা এখন সাংঘাতিক আধিপত্যকামী এবং এক্ষুনি থামছে না।


(মুভি পোস্টার সৌজন্যেঃ বলিউড হাঙ্গামা ডট কম)

Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page