শাসকদলের দুর্নীতি মুক্ত পুরসভার প্রচারে উঠছে প্রশ্ন!
চার চারটি কর্পোরেশনে বিপুল জয়। বিরোধীদের কার্যত কবরে ঢুকিয়ে এখন বোর্ড গড়ার কাজ। এ’রাজ্যে বিরোধী মডেল তৈরির কারিগরই নির্বাচনে ভূপতিত। বসন্তের শুরুতেও অশোক নিজের রং ছড়াতে পারেনি। এখন সব ঋতুতেই বাংলায় শুধু ঘাসফুল। প্রকৃতির রং শুধুই সবুজ। তবু কেন এত চিন্তা!
২৭ ফেব্রুয়ারি মালদার দুই পুরসভার নির্বাচন। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। মাঝের এই সময়কালে দুই পুরসভা পেয়েছে প্রশাসক। অর্থাৎ ঘর গোছানোর সময় মিলেছে অনেক। দুই শহরের প্রশাসকই প্রতিনিয়ত প্রচারের আলোয় থেকেছেন। আই লাভ মার্কা বোর্ড বসিয়ে দিয়েছেন নিজের নিজের এলাকায়। ছেলে-বুড়োর দল সেই বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। মুঠোফোনে খচাখচ শব্দ। নেই ভুলেছে সবাই।
প্রশাসনিক বৈঠকে খোদ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আর দাও দাও করবে না। অনেক দিয়েছি। আর পারব না।’ নেত্রীর মতো অতটা সাহসী হতে পারেননি দুই পুরসভার প্রশাসক। মানুষকে কেউ সরাসরি বলতে পারেননি, ‘আর দাও দাও করবে না।’ কারণ, নেত্রীর মতো তাঁদের দু’বার ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। কোনও কারণে হেরে গেলে তাঁদের জন্য কেউ নিজেদের ওয়ার্ড ছেড়ে সরে দাঁড়াবেন না। তাই তাঁরা মানুষকে পই পই করে বুঝিয়েছেন, সব হবে। ধীরে ধীরে হবে। ভোটে জেতার পর হবে। হবেই।
মাসে মাসে ৫০০ টাকা পাওয়া মায়েরা জানেন, সব হবে। পুজোয় ৫০ হাজারি ক্লাবগুলো জানে, সব হবে। বিভিন্ন পার্বণে দাক্ষিণ্য পাইয়েরাও জানে, সব হবে। কিন্তু কী হবে, সেটাই কেউ জানে না। দুই শহরের নিজস্ব ডাম্পিং গ্রাউন্ড হবে কিনা, কেউ জানে না। বর্ষার আগে মালদা শহরে আর্সেনিকমুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পাওয়া যাবে কিনা, কেউ জানে না। পুরাতন মালদা পুরসভার মধ্যে থাকা সব ওয়ার্ডের সব রাস্তা পাকা হবে কিনা, কেউ জানে না। যদিও এই না জানা মানুষের সংখ্যাটা বড্ড কম। সেভাবে কথাবার্তাই শোনা যাচ্ছে না যে…
তা এখন শুধু নির্বাচনি বাদ্যই না হয় শোনা যাক। কিন্তু সেই বাজনাটাও তো বড্ড একপেশে। শুধুই তৃণমূল। কান খুললেই মাইকে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত পুরসভা গঠনের আহ্বান। কেন? তবে কি আগের পুরবোর্ড দুর্নীতির আখড়া ছিল? নইলে এই আহ্বান কেন? যাকগে, এসব না হয় দল আর মানুষ বুঝবে। কিন্তু বিরোধীরা গেল কোথায়? তাদের তো মাঠেই দেখা যাচ্ছে না। যা দেখা মিলছে, সব দেওয়ালে। কয়েকটি ওয়ার্ডে নতুন রক্ত পথে নেমেছেন বটে, কিন্তু তা নেহাতই নগণ্য।
এত নৈঃশব্দ্য…কোনও ঝড়ের পূর্বাভাস নয়তো! গতকাল মালদায় এসেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতা ফিরহাদ হাকিম। তিনি এই জেলার দুই পুরসভার নির্বাচনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত। দুই পুরসভার ৪৯ জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। জানতে পেরেছেন, ইংরেজবাজারে ১৩ আর পুরাতন মালদায় ১২ ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর পা কাটার অপেক্ষায় শামুকে শান দিয়ে রেখেছেন দলেরই নেতা-নেত্রীদের একাংশ। তাই বার্তা দিয়েছেন, পাঁচ দিন। মাত্র পাঁচ দিন তিনি দেখবেন। তার মধ্যে এই কাঁটারা যদি লিফলেট বিলি করে ভোট থেকে সরে না দাঁড়ান, তবে তাঁদের দল থেকে তাড়ানো হবে। যদিও তাঁর এই হুমকি আমলই দিচ্ছেন না গোঁজ প্রার্থীরা। অন্তত এখনও পর্যন্ত।
ফিরহাদ সাহেব তো গোঁজ প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভোট ময়দান থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। কিন্তু যদি এই গোঁজরাই কোনও কারণে ভোটে জিতে যান! তাঁরাই যদি দুই পুরসভায় বোর্ড গঠনে নির্ণয়ক ভূমিকা নেন! তাহলে সেই তাড়িয়ে দেওয়া নেতা-নেত্রীদের ফের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না তো? তখন আপনাকে গলায় গামছা দিয়ে তাঁদের ঘরে দেখা যাবে না তো? দুই শহরের মানুষ সেটাই এখন জানতে চাইছে ফিরহাদ সাহেব।
[ আরও খবরঃ পরিবহন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ]
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comentarios