থ্রেট কালচার, ফ্রেট করিডর
থ্রেট কালচার৷ ২০২৪ সালের ৯ অগাস্টের পর রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে নতুন এই শব্দবন্ধের উৎপত্তি৷ এই থ্রেট কালচার কিন্তু নিছক র্যাগিং নয়৷ র্যাগিং-এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী৷ কিন্তু এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী৷ যে প্রভাব একটা সিস্টেমকে ঘুণ ধরিয়ে দিতে পারে৷ আরজি করের ঘটনার পর এখনও শুধুমাত্র রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই থ্রেট কালচারের বিষয়টি শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে যে এই কালচার শিকড় ছড়ায়নি, তা কে বলতে পারে? যদি সেটাই হয়, তাহলে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার সলিল সমাধি শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা৷ তেমনটাই মনে করছে শিক্ষা মহল৷
এই মুহূর্তে রাজ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম সন্দীপ ঘোষ৷ তিনি আরজি কর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ছিলেন৷ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর তাঁর প্রভাব যে কোন আলাদিনের প্রদীপের ছোঁয়ায় আকাশ ছুঁল, বুঝতে পারছেন না তাঁর সহপাঠীরাও৷ বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার তো প্রকাশ্যেই বলেছেন, সন্দীপের মতো সাধারণ ছেলে এত ক্ষমতার অধিকারী কীভাবে হল, তাঁরা বুঝতে পারছেন না৷ রায়গঞ্জ মেডিক্যালের একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুধুমাত্র সন্দীপের বিরোধিতা করায় তাঁদের রায়গঞ্জে বদলি করা হয়েছে৷ এমনকি অনেক চিকিৎসক কয়েক ঘণ্টার নোটিশে বদলি হয়েছেন৷
এখানেই প্রশ্ন৷ ক্ষমতার অলিন্দে সন্দীপের কতটা যাতায়াত? কোনও চিকিৎসককে বদলি করার ক্ষমতা কিন্তু কোনও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের থাকতে পারে না৷ সেই ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীদের৷ তাঁরাও কি সন্দীপের কথায় ‘ওঠবস’ করতেন? নাকি সন্দীপের মাথায় রয়েছে আরও বড় হাত৷ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছে ইডি৷ তিলোত্তমার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় নাকি তাঁর যোগ খুঁজে পেয়েছে সিবিআই৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেটা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও নাকি জানিয়েছে৷ সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের হাতে তুলে দিয়েছে একটি নামের তালিকা৷ সেই তালিকায় অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম থাকার সম্ভাবনা বলেই মনে করা হচ্ছে৷
এই তালিকাভুক্ত রাঘব-বোয়ালরাও থ্রেট কালচারে জড়িত বলে মনে করছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক পড়ুয়ারা৷ এই কালচারে কীভাবে প্রভাবশালীরা লাভবান হয়? তাঁরা জানাচ্ছেন, এই থ্রেট কালচার র্যাকেট সন্দীপ ঘোষেরই মস্তিষ্কপ্রসূত৷ সেই র্যাকেট রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছড়িয়ে রয়েছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই র্যাকেট শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের সমর্থনে কাজ করে৷ মালদা মেডিক্যালেও টিএমসিপির একটি অবৈধ ইউনিট এতদিন সক্রিয় ছিল৷ সেই ইউনিটের মাধ্যমেই কলেজের কনভোকেশনের মঞ্চে পাস আউট পড়ুয়াদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিয়েছিল সেই র্যাকেটের কুখ্যাত সদস্য অভীক দে৷ এরা নানা আছিলায় পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা তোলে৷ ভয় দেখিয়ে পড়ুয়াদের চুপ করিয়ে রাখে৷ কারণ, শাসক তাদের সঙ্গে৷ নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পড়ুয়ারাও এদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না৷ এভাবেই এরা ফুলেফেঁপে উঠেছে৷
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের কথা কতটা ঠিক, এর পিছনে সত্যিই শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে কিনা, সেসব আর কিছুদিনের মধ্যেই সামনে বেরিয়ে আসবে৷ কারণ, ইতিমধ্যেই বিষয়টিতে নজর দিয়েছে ইডি৷ তাই এখনই এনিয়ে কোনও ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না বিদ্বজ্জনরা৷ তাঁরা বলছেন, আর খানিক সবুর করতে আপত্তি কোথায়? কানে টান পড়লেই মাথা এগিয়ে আসবে৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments