গ্যালিলিয়ো - আধুনিক নাটকের এক নতুন সংজ্ঞা
দিব্যভিব রায়ঃ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাব-এর সূচনা হল গত উনিশে সেপ্টেম্বর মালদার দুর্গাকিংকর সদনে। প্রথম প্রযোজনা হিসেবে বের্টোল্ট ব্রেখটের নাটক গ্যালিলিয়োকে বেছে নিয়েছেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তথা নাটকের নির্দেশক ড. সমীপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নাটক শুধুমাত্র গ্যালিলিয়ো গালিলেই-এর আবিষ্কার বা তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেন্দ্রিক নয়। নির্দেশক ব্রেখটের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন অভিনব ভাবনা।
নাটকের শুরু আমাদের খুব চেনা গান দিয়ে – ‘উঃ চাঁদ খিলা, উঃ তারে হাঁসে ইয়ে রাত আজাব মাতোয়ালি হ্যায়’ - রাজ কাপুর-নার্গিস জুটির বিখ্যাত ছবি 'আনাড়ি'র সেই মন মাতানো গান দিয়ে নির্দেশক নিয়েছেন যাকে বলে এক ড্রামাটিক এনট্রি। মঞ্চে তখন আকাশ ভরা সূর্য তারা আর তার সামনে এই গানটির সাথে নেচে চলেছে কলাকুশলীরা। বাংলা ভাষায় বলিউড আর ব্রেখটের এমন সমন্বয় কি ভাবা হয়েছিল এভাবে? জানি না। এমন একটি রাত থেকে শুরু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক-এর গল্প। গ্যালিলিয়োর জীবনের টানাপোড়েন, তাঁর আবিষ্কার, তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক, তাঁর উত্থান পতনের এক অপূর্ব কাহিনী এই নাটকের সম্বল। নাটকের অন্যতম সম্বল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনয়। দুঘণ্টার নাটকে তাঁরা যে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে, তা শব্দে ধরা কঠিন। এই নতুন যৌবনের দূতদেরকে আমার অনেক অভিনন্দন।
তবে গ্যালিলিয়ো চরিত্রে কৌশিক চন্দ্রের কথা না বলে থাকা যায় না। কৌশিকের বলিষ্ঠ অভিনয় গ্যালিলিয়োর প্রাণশক্তি। সত্যের পূজারী যখন সমাজ এবং ধর্মের জাঁতাকলে পিষ্ট, সেই মানুষের মনের অবস্থার অভিব্যক্তি যে সাবলীলভাবে ফুটিয়েছেন কৌশিক, তা নাটক না দেখলে সত্যি বোঝা দায়। সিন্যরা সার্টি এবং গ্যালিলিয়োর অনেক মুহূর্ত মনকে ছুঁয়ে যায়। সারটির চরিত্রে রুম্পা পোদ্দার এবং ছোটো আন্ড্রেয়ার ভূমিকায় সমাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অভিনয় দর্শকদের কাছে অতিরিক্ত প্রাপ্তি। নাটকটিকে সমৃদ্ধ করেছে তার আবহ সঙ্গীত। হিন্দি ছবির গান থেকে পাঁচালির ব্যবহারে গ্যালিলিয়ো পেয়েছে আধুনিক নাটকের এক নতুন সংজ্ঞা।
গ্যালিলিয়ো নাটকটি এক নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়েছে মালদার মানুষদের মনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক এবং ড্রামা ক্লাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় সন্ধেবেলায় সিরিয়ালের থেকে মনটা সরিয়ে নতুন ভাবনার বিকাশ ঘটানোই এই ড্রামা ক্লাব-এর উদ্দেশ্য। গ্যালিলিয়োর মতো সত্যের এবং সাহিত্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে ড্রামা ক্লাব। মালদায় বসে অনেকটা ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল দেখার মতো অনুভূতির জন্য অনেক ধন্যবাদ নির্দেশককে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। খুব মনে পড়ে যাচ্ছে শেষ দৃশ্য। ক্ষীণ হয়ে আসা গ্যালিলিয়োর দৃষ্টি; সত্যের মোকাবেলায় আজও আমরা অক্ষম। গ্যালিলিয়ো সম্ভবত এই ‘আনাড়ি’অবস্থার আয়না হয়ে দাঁড়ায়। আন্দ্রিয়ার মধ্যে যেমন বেঁচে থাকে গ্যালিলিয়ো, সত্য বেঁচে থাকে আলোয় আলোয়, এই আকাশে। ড্রামা ক্লাব হয়ে উঠুক সাহিত্য, সত্য আর বিনোদনের সঠিক মেলবন্ধন।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comentários