চেয়ারের চৌরাস্তা। মিলবে কোথায়?
‘ঘুঁটিটা উনি ভালোই সাজিয়েছেন। শুধু ইংরেজবাজার নয়, পুরাতন মালদাতেও। এখন দেখা যাক, নেতৃত্ব কী বলে…’
এবার কে? মালদার দুই পুরসভায় কে চেয়ারম্যান হবেন, এখন সেটাই প্রতিটি আড্ডায় লাখ টাকার প্রশ্ন। তা নিয়েই সহাস্যে উপরের মন্তব্য জেলাস্তরের এক তৃণমূল নেতার। উনি মানে কে? বুঝতে অসুবিধে হয় না। তিনি কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি।
এবারের পুরভোটে ইংরেজবাজারে তৃণমূল ঊনত্রিশে পঁচিশ। ফলে বোর্ড গঠন নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। প্রশ্নটা চেয়ারম্যান নিয়ে। এই পদে দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণের। অনেকেরই ধারণা, চেয়ারম্যান পদে তাঁকে ছাড়া শাসকদলের রাজ্য নেতৃত্বের দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই। তার উপর গতকাল কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত দলনেত্রীর সভায় কৃষ্ণেন্দুকে দলের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁকে চেয়ারম্যান করার ইঙ্গিত আরও জোরালো হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। তবে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালের সভায় জানিয়ে দিয়েছেন, চেয়ারম্যান নিয়ে কোনও লবিবাজি চলবে না। তাঁর এমন মন্তব্যে কৃষ্ণেন্দু বিরোধীদের মুখে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এই মহলের বক্তব্য, পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে এই শহরের মানুষ সেই কৃষ্ণেন্দুকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছিল, কৃষ্ণেন্দুকে নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে তারা চায় না। এবার পুরসভার ২৫টি আসনের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষ্ণেন্দুর অনুগামী হিসাবে পরিচিত। সেই হিসাবে এবার যদি তাকেই ফের চেয়ারম্যান করা হয়, তবে আগামীতেও ইংরেজবাজারের মানুষ তৃণমূলের বিপক্ষেই নিজেদের রায় দেবে।
[ আরও খবরঃ সুখের জোয়ারে চাঁদেই পাড়ি মালদার দম্পতির, কিনলেন জমি ]
চেয়ারম্যানের চেয়ারের জটিল অঙ্ক পুরাতন মালদাতেও। এখানে কাকা-ভাইপোর শীত যুদ্ধ অনেকদিন ধরেই দেখে আসছেন শহরের মানুষ। কাকা বিভূতিভূষণের বয়স হয়েছে। পুরভোটে জিততে তিনি তাঁর পুরোনো নেতা বরকত গনি খানের মন্তব্যকে অন্যতম হাতিয়ার করেছিলেন। জনার্দনের দরজায় গিয়ে জানিয়েছিলেন, এবারই হয়তো শেষ ভোট তাঁর। প্রবীণ এই রাজনীতিককে ফিরিয়ে দেয়নি জনতা। ফলেই তার প্রমাণ। অন্যদিকে, ভাইপোর লবি বলছে, কার্তিকের আমলে পুর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, দেড়শো বছরের পুরসভার বাসিন্দারা তা আগে কখনও দেখেনি। তাই এবারও কার্তিক। তাঁর বিরোধী লবির বক্তব্য, নিজের আমলে এলাকার কিছু উন্নয়ন হয়তো কার্তিক করেছে! কিন্তু তার নিজের উন্নয়নও কম হয়নি। একাধিকবার দুর্নীতির স্ট্যাম্প সেঁটে গিয়েছে তার নামে। বুলবুলচণ্ডী মোড়ের তার আলিশান ভবনই এর প্রমাণ। তাই তাকেই যদি ফের চেয়ারম্যান করা হয়, তবে গত দুটি বিধানসভা ও একটি লোকসভা নির্বাচনের মতো আগামীতেও পুর এলাকার মানুষ শাসকদল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই কুড়িতে সতেরো পেয়েও চিন্তায় পুরাতন মালদার তৃণমূল শিবির।
কী হবে, কে হবে, তা ঠিক করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আপাতত আড্ডাতেই জমে থাক মালদার দুই শহর।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Komentáře